গয়েশ্বরের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা

প্রথমে তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া, এরপর গয়েশ্বর; গুনে গুনে শহীদদের তালিকা চেয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তিনিও। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আর্কাইভ নিয়ে কাজ করেন এমন গবেষকরা বলছেন, আদর্শিক ভিত্তি থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছে এই দলের শীর্ষনেতারা। বিএনপির দলীয় লিখিত আদর্শের দিকে জনগণের দৃষ্টি দিয়ে দলটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ওই গবেষকরা। পাশাপাশি এ প্রজন্মের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্র নিয়ে কেউ যেন আগামীতে নির্বাচন করতে না পারে।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গুনে গুনে ৩০ লাখ শহীদের নাম পত্রিকায় প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা ৩০ লাখ হোক বা ৬০ লাখ হোক তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। তাদের তালিকা থাকবে না কেন? কী কারণে থাকবে না? এই শহীদদের নাম উল্লেখ করে এলাকায় এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে হবে।’

তার এই দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টির ডক্টরাল ক্যান্ডিডেট ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম-এর সদস্য ওমর শেহাব বলেন, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া বা গয়েশ্বর রায় যখন এসব কথা বলে আমাদের বুঝতে হবে কেন বলছে। কারণটি লুকিয়ে আছে বিএনপি'র গঠনতন্ত্রে। বিএনপির এই আচরণের মূল কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্র। ওটা নিয়েই তাদের পথ চলা। আর এমন গঠনতন্ত্র নিয়ে কেউ যেন নির্বাচন করতে না পারে সেই দাবি তোলার সময় এসেছে।

তর্ক তোলার কোনও সুযোগই নেই উল্লেখ করে আমির মুহাম্মদ বলেন, বিশিষ্ট রাজনীতি বিজ্ঞানী রুডলফ জোশেফ রুমেল তার ‘China’s Bloody Century’ এবং ‘Lethal Politics: Soviet Genocide and Mass Murder Since 1917’ নামের দু’টি গবেষণা বইয়ের পরিশিষ্টে গণহত্যার পরিসংখ্যান কিভাবে করতে হয় সেটার একটা পদ্ধতি দিয়েছেন। তার গবেষণায় তিনি নিম্ন, মধ্যম এবং উচ্চ সম্ভাবনার স্কেলে মানুষের হত্যার হিসাব করেছেন। তার ডেমোসাইডের পরিসংখ্যান পদ্ধতি অনুযায়ী তিনি সূত্র উল্লেখ করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তির সংগ্রামে ৩০,০৩,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক সাব্বির হোসাইন বলেন, শুধু সম্মুখ সমরের হিসাব নয়, শরণার্থী শিবিরে, ঘরহারা কত মানুষ মার্চ এপ্রিলে নিহত হয়েছে, কত মানুষ ছিল এখন কোথাও আছে কিনা জানা নেই, কেননা তারা ফেরেননি আর। এর কোনও হিসাব আছে? গুনে গুনে শহীদদের নাম চাওয়ার বিষয়টা খুবই দুর্ভাগ্যের। এই বিতর্কসৃষ্টিকারীরা ১৯৪৭-এর দেশভাগের শিকার কতোজন হয়েছিল তার তালিকা দিতে পারবেন বা ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের? ১৯৭২ সালে পত্রিকায়, আন্তর্জাতিকভাবে যখন ৩০ লক্ষ শহীদের কথা বলা হচ্ছে, তারপরও কেন বিতর্কটা তুলতে চাইছে সেটা ভাবা দরকার। আদর্শিকভাবে বিএনপি কখনোই জামায়াতের বাইরে কিছু ছিল না, সেটা আবারও তারা নিজেরাই প্রমাণ করলো।

/এফএ/

/আপ: আরএ/