বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি: বিস্মিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির দাপট, অস্থিরতা, সেশনজট দেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। শিক্ষার পরিবেশ, সেশনজট, রাজনৈতিক সংঘাত সবকিছু মিলিয়ে উদ্বেগ থাকায় আমার অভিভাবকরাও তাতে সায় দেন। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ছাত্র রাজনীতি শুরু হয় তাহলে সেই দুশ্চিন্তা আবারও ফিরে আসে। হঠাৎ কী এমন হলো যে এখানেও ছাত্র রাজনীতি, প্রচলিত কমিটি গঠন, এসব করতে হবে?’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ধানমন্ডির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি কখনোই সরব ছিল না। তবে সম্প্রতি গণহারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। আগে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি থাকলেও গত কয়েক দিনে ৪০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির অনুমোদন দিয়েছে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর এমন কমিটি দেওয়া শুরু করে তারা। এমনকি সব ছাড়িয়ে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) জোরেশোরে বার্ষিক সম্মেলন করেছে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট। শনিবারের আয়োজন ও মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সামাজিক মাধ্যমেও অনেক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন এমন সিদ্ধান্তের। তাদের শঙ্কা, এখন অন্য দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকতে চাইবে। এতে শিক্ষার পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হবে।

সম্প্রতি কমিটি দেওয়া রাজধানীর একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগ যেখানে ঢুকবে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও প্রবেশ করবে। সব সংগঠনের এক জায়গায় সরব রাজনীতির ফলাফল তো আমরা অনেক বছর ধরেই দেখছি। এক দল কর্মসূচি দেবে, অন্য দল এসে সেটি বন্ধ করবে। এটাই তো চলে আসছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব শুরু হলে বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি কেমন হবে।

ধানমন্ডির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বাবা নাজমুল আহমেদ বলেন, পরিবেশের কথা চিন্তা করে টাকা খরচ করে মেয়েকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করলাম। রাজনৈতিক সংগঠন যতদিন ছিল না ভালোই তো ছিল। এখন ছাত্রলীগ শুরু হবে। তারপর বাম-ডান আরও কত কী। একজনের আরেকজনের ওপর দমন-পীড়ন চলবে। তাদের সংগঠনে নাম লেখানোর প্রতিযোগিতা চলবে। এগুলোর জন্য তো মেয়েকে প্রাইভেটে ভর্তি করাইনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির সুস্থ চর্চা তো হয় না। যেটা হয় তা হলো ক্ষমতা প্রদর্শন। সুস্থ ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু এখন ছাত্র রাজনীতির নামে যা হয়, সেটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরব হলে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এতে শিক্ষার্থীদের ওপর আলাদা একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার প্ল্যানের কারণে শিক্ষার্থীর ওপর এমনিতেই চাপ থাকে। তাছাড়া এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ তো আছেই। সেগুলোর সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকে তারা। এখন এসবের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তৈরি হলে লেখাপড়ার ওপর আলাদা চাপ তৈরি হবে।

তবে শঙ্কার কোনও কারণ নেই উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেকোনও ছাত্র সংগঠন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কাজটিই সংগঠন করে থাকবে। এ নিয়ে কোনও শঙ্কার কারণ নেই।