রাজনীতির রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা। শুক্রবার (৯ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক শোক-বিবৃতিতে রাজনীতিকরা বলেছেন, ‘সিরাজুল আলম ছিলেন দেশের সব সংগ্রামের একজন অন্যতম অংশীজন। তিনি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অপরিহার্য অংশ।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সিরাজুল আলম খান প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। ঘোষণা করা হয়েছিল ‘আমরা লড়ছি শ্রেণি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
দাদা ভাই নামে খ্যাত সিরাজুল আলমের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী সিরাজুল আলম খানের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সিরাজুল আলম খানের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সিরাজুল আলম খানের মতো দেশপ্রেমিক আজীবন বিপ্লবীকে হারানো দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। প্রগতিশীল রাজনীতির প্রবাদপুরুষ সারা জীবন দেশের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেকে।
ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একদিকে যেমন অতল রহস্য নিয়ে বেঁচে ছিলেন, তেমনি সেই রহস্যের পথ ধরেই রাজনৈতিক আলোর সন্ধান করেছেন যিনি, তিনি সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই। রাজনীতির ইতিহাসে সিরাজুল আলম খান অপরিহার্য অংশ।
এম এ আউয়াল আরও বলেন, ১৯৬২ সালেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন সিরাজুল আলম খান। এই নিউক্লিয়াসই ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ৬ দফা, ১১ দফাসহ প্রতিটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার পক্ষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম ত্বরান্বিত করে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের রূপকার জাসদ নেতা সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ১২ দলীয় জোট নেতারা।
শুক্রবার পাঠানো শোক বিবৃতিতে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি, ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, জাতীয় সংগীত নির্বাচন, জয় বাংলা বাহিনী গঠন এবং তার কুচকাওয়াজ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে সামরিক অভিবাদন জানানো—সবই ছিল সিরাজুল আলম খানের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘দাদা ভাইয়ের ইন্তেকালে দেশ ও জাতি একজন অভিভাবককে হারালো। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় তার অবদান মুক্তিকামী গণতন্ত্রীদের প্রেরণা জোগাবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এক বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের পুরোধা সংগঠক জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে দেশ এক সূর্যসন্তানকে হারিয়েছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ষাটের দশকের প্রথমার্ধে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খানসহ অন্যরা স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি কালপর্বের অবসান এবং জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।