গণতন্ত্র হত্যাকারীরাই দেশে প্রভুত্ব করছে: শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারীরাই এখন দেশে প্রভুত্ব করছে। গায়েবি মামলার সাজা হয়, কিন্তু লুটের কোনও সাজা হয় না। দুর্নীতির মামলায় সাজা তো দূরে থাক, তারা মন্ত্রী হয়, এমপি হয়, তারা সংসদে থাকে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকনের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ গায়েবি মামলার ‘ফরমায়েশি’ রায়ের প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে দেশকে রক্ষা করা কঠিন হবে। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ থাকবে না। বাংলাদেশকে যদি সত্যিকারের বাংলাদেশ রাখতে হয় তাহলে গণতান্ত্রিক, মানবাধিকারের, স্বাধীনতার বাংলাদেশ গড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে আপনি স্বাভাবিকভাবে কোনও কাজ করতে পারবেন না। যার চিকিৎসা দরকার, তার চিকিৎসা হবে না যদি কর্তা মনে না করেন। আপনি জামিন পাবেন না, যদি আপনি সরকারের কৃপায় না থাকেন। আর যদি আপনি সরকারের কৃপায় থাকেন, শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদদের কৃপায় থাকেন, তাহলে আপনি ব্যাংক ফাঁকা করে ফেলবেন, লুটের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছাবেন, আপনার তদন্তই হবে না। যাই করেন, আপনি সিংহের মতো ঘুরে বেড়াবেন।’

পাকিস্তান যেভাবে বাংলাদেশকে পরিচালনা করেছিল, আওয়ামী লীগ এখন সেভাবে দেশকে পরিচালনা করছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পাকিস্তানিরা আমাদের বঞ্চিত করেছিল, আমাদের অধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে। সেজন্য পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পাকিস্তানি প্রেতাত্মা বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর কাঁধে ভর করেছে।’

দুদু বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে স্বাভাবিক জীবন তো দূরে থাক, খুব জরুরি চিকিৎসা দরকার, সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান সুদূর লন্ডন থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাকে একের পর এক মামলা এবং সাজা দেওয়া হচ্ছে। দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টার নোটিশে বিএনপি যত বড় মিটিং করে, এতেই প্রমাণ হয়, দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল এখন বিএনপি। আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাচ্ছি, সেই কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, বর্তামান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন চাচ্ছি।’

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন না হলে অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের হুমকি দিয়েছেন, যদি ঢাকা শহরে অবরোধ হয়, বাংলাদেশে অবরোধ হয়, তাহলে মতিঝিলের মতো ঘটনা ঘটবে। আরও অনেক মন্ত্রী বলছেন, হাত-পা ভেঙে নাকি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেবেন। এগুলো সুস্থ-স্বাভাবিক চিন্তার লক্ষণ নয়। ভাঙা-ভাঙি না হওয়াই ভালো। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন হওয়া ভালো। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জয়-পরাজয়ে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। তা যদি না হয়, অন্য কিছুর মধ্য দিয়ে যদি এ দেশে পরিবর্তন সংগঠিত হয়, তাহলে এটি কোনও স্বাভাবিক পরিবর্তন হবে না। এটি খুবই মর্মান্তিক হবে এবং এর জন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে।’

দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় আরও ছিলেন– বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।