স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিব ঘোষণা এ সপ্তাহে!

হোঁচট খেলেন বিএনপি নেতারা

বিএনপি৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলেই ‘ভারমুক্ত’ মহাসচিব পাচ্ছে বিএনপি- এমন প্রত্যাশা নিয়েই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন সারাদেশের কাউন্সিলর ও দলটির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও আশা ছিল, শীর্ষ দুই পদের পাশাপাশি মহাসচিব পদটিও ঘোষিত হবে। শেষ পর্যন্ত মহাসচিব পদটি ‘ভারমুক্ত’ না হওয়ায় অনেকটাই হোঁচট খেলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে কাউন্সিলে ঘোষণা না হওয়ায় হোঁচট খেলেও তাদের প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে এ সপ্তাহেই। সপ্তাহের যে কোনও দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিব হিসেবে মনোনীতদের নাম প্রকাশ করবেন খালেদা জিয়া। এক্ষেত্রে মহাসচিব হিসেবে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই চূড়ান্ত। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা, কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কাউন্সিলে ঘোষণা না হলেও দু-একদিনের মধ্যেই স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিব পদের ঘোষণা দেবেন চেয়ারপারসন।

চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা আসবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, এ সপ্তাহেই আসবে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী হিসেবে স্থায়ী কমিটির নিয়োগ আগেই দেবেন চেয়ারপারসন। এই দুটি মনোনয়নের পরই ভাইস চেয়ারম্যান পদের নাম ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। একই সম্ভাবনার কথা জানান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুও।

বিএনপি নেতারা বলছেন, শনিবারের সম্মেলনে বিএনপিতে অনেক পরিবর্তনই হয়েছে। রীতি অনুযায়ী মহাসচিব পদ ইতোপূর্বে কাউন্সিলের পরে ঘোষিত হলেও এবার প্রত্যাশা ছিল অন্যান্য পরিবর্তনের সঙ্গে এ পরিবর্তনটিও হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার সমাপনী বক্তব্যে এ নিয়ে কোনও ইঙ্গিতও দেননি। কাউন্সিলরা তাকে সর্বসময় ক্ষমতা দেওয়ায় তিনি বলেছেন, তিনি ভেবে-চিন্তে কমিটি গঠন করবেন, খোঁজ খবর নিয়ে করতে হবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, মহাসচিব পদে মনোনয়ন বিলম্বিত হলেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই চূড়ান্ত হয়ে গেছেন। শনিবারের মূল অধিবেশনেই বিষয়টি মিটমাট হয়েছে।

ওই পর্বে সারা দেশের কাউন্সিলরদের যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রস্তাব ছিল, দ্রুত মহাসচিব পদটি ভারমুক্ত করার এবং যেহেতু এ পদে প্রার্থী নেই, সেহেতু মির্জা ফখরুলকেই ঘোষণা করা হোক। কাউন্সিলে মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলের নাম প্রস্তাব করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ, জয়পুরহাটের মোতাহার আলী প্রধান, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ সভাপতি  হুমায়ুন কবির নান্নু, বিলকিস শিরীন, রাঙামাটি সদরে বিএনপির নেতা মামুনুর রশীদ। তাদের প্রত্যেকেই প্রস্তাব করেছেন, মহাসচিব পদটি আর কতদিন ঝুলিয়ে রাখা হবে। বিএনপির মতো একটি বড় দল ৬ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলতে পারে না। তাদের প্রত্যেকের বক্তব্যের  সময়েই কাউন্সিলে ঠিক-ঠিক বলে রব উঠে। যদিও খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত মহাসচিব পদে কাউকে মনোনয়ন দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা হওয়ার কথা ছিল। তবে বিগত দিনের রীতি অনুযায়ী ম্যাডাম হয়তো আরও কিছু পর ঘোষণা দেবেন।

কত সময় পর ঘোষণা আসতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এটা এক সপ্তাহও হতে পারে। তার বেশিও হতে পারে। রীতি অনুযায়ী স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গেই হয়তো ঘোষণা আসবে।

যদিও কাউন্সিলেই ঘোষণার জন্য মানসিক প্রত্যাশা ছিল, এমনটি মন্তব্য দুদুর। তিনি বলেন, প্রধান দুটি পদের বাইরে সবার প্রত্যাশা ছিল যে মহাসচিব পদ ঘোষণা হবে। এটি তো অনেক দিন ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। তবে কেন হয়নি, সেটি হয়তো ম্যাডাম জানবেন।

প্রত্যাশার কথা কাউন্সিলররা স্বয়ং জানিয়েছেন এবং মির্জা ফখরুলের প্রতিদ্বন্দ্বি নেই এটিও সম্মেলনে প্রমাণিত হয়েছে- এমন মন্তব্য আরেক উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরীর। তিনি বলেন, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তো প্রস্তাবই করেছেন, যেহেতু মির্জা ফখরুলের বাইরে কেউ নেই, সেহেতু মহাসচিব হিসেবে তার নাম ঘোষণা দেওয়া হোক।

কি কারণে হয়নি, এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি  প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের এই সাবেক চেয়ারম্যান।

জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, কাউন্সিলে না হলেও খুব দ্রুত ঘোষণা আসবে, এটি জানি।

/এসটিএস/ এপিএইচ/