কামরুল চিন্তিত, খোশমেজাজে মোজাম্মেল!

আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কামরুল ইসলামদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব থাকা বা না থাকা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তাই অফিসেও আসছেন দেরি করে। এদিকে, বেশ খোশ মেজাজে আছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। সকাল হলে মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে বসছেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে নিজ দফতরে আসেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। এসে দাফতরিক কাজ করেন। বেলা বাড়ার পর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের ভিড় জমে তার দফতরে। কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট নিতে আসেন, কেউ আসেন মন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করাতে। সবাইকে সামালও দেন তিনি। দুপুরে এ প্রতিবেদক মন্ত্রীর মুখোমুখি হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তার দফতরে আসেন বেলা ২টায়। এরপর বেশ কজন পরিচিত ও দলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরই এক পর্যায়ে এ প্রতিবেদক মুখোমুখি হন কামরুল ইসলামের। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আদালতের রায় এবং পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে  চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। যা বলার কালই (সোমবার) বলে দিয়েছি।

জানা গেছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আলোচিত এই দুই মন্ত্রীর ব্যাপারে সোমবার সরকারের মনোভাবের কথা প্রকাশ করার পর মোজাম্মেল হক চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। মূলত এরপর থেকেই তাকে বেশ ফুরফুরে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এখনও আশ্বস্ত হতে পারছেন না বলে জানা গেছে। এ কারণে মঙ্গলবারও নিজ লবিংয়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পর আপিল করতে পারেন দুই মন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের জরিমানার রায়ে দুই মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গ হয়নি। সংবিধানের কোনও ধারাও লঙ্ঘিত হয়নি। ফলে তাদের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে—এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চাইলে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

জানা গেছে, আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুই মন্ত্রীকে স্বপদে বহাল রাখা কেন অবৈধ, অসাংবিধানিক ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল হবে না—৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুলফিকার আলী জুনু।

মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মামলার রায় নিয়ে ৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনায় সংশয় প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। কামরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আলাদা বেঞ্চ গঠন করে মামলার পুনঃশুনানি এবং আকম মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতির মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মন্ত্রীদ্বয়ের সংশয়ের পর ৮ মার্চ মীর কাশেম আলীর ফাসির আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে আপিল বিভাগ দুই মন্ত্রীকে আদালতে তলব করেন। একই সঙ্গে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে আদালত অবমাননার কার্যক্রম কেন শুরু করা হবে না—তা জানাতে দুই মন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এ সময় বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে অশুভ ও অবমাননাকর বক্তব্যে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা স্তম্ভিত। যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।’

জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে দুই মন্ত্রী আদালতের নোটিশের জবাব দেন। আদালত তা খারিজ করে দেন এবং আদালত অবমাননার অভিযোগে রবিবার খাদ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে জরিমানার এ অর্থ জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

/এমএনএইচ/