গণমুখী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আ.লীগের নতুন কমিটি

আওয়ামী লীগদলকে আরও গণমুখী করার লক্ষ্য নিয়েই নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সমাজ থেকে দারিদ্র দূর করতে সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে নেওয়া ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচার করার দায়িত্ব নতুন কমিটির উপর বর্তাবে। এমনটাই মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতারা।
নেতারা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনের স্বাগত ভাষণে সমাজের নিঃস্ব, রিক্ত ও গৃহহীনদের যে তালিকা করতে বলেছেন সে কাজটিও এ কমিটির উপরেই বর্তাবে।’ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এবারের কমিটি দেওয়া হয়েছে দলের কাজ দল করবে আর সরকারের কাজ সরকার করবে, এটি ভেবেই। দল সরকারের সহায়ক শক্তি হিসাবে থাকবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সারাদেশে প্রচার করবে নব নির্বাচিত এই কমিটি।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নব গঠিত কমিটির অন্যতম লক্ষ্য দলকে সুসংগঠিত করা, শক্তিশালী করা সর্বোপরি আওয়ামী লীগকে আরও গণমুখী করে তোলা। আগামী নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করতে এ কমিটিকে অনেকদূর পাড়ি দিতে হবে।’

হানিফ বলেন, ‘এ কমিটির বড় দায়িত্ব দলকে গণমুখী করা, জনগণের সমস্যা তুলে এনে সরকারকে অবহিত করা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেতা বানানোর আগে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। তারপরই পদ দিয়েছেন।’

দলের দায়িত্বশীল এসব নেতারা মনে করেন, এরই অংশ হিসাবে ঘোষিত কমিটিতে আনা হয়েছে কর্মঠ, উদ্যোমী নতুন কিছু মুখ। আনা হয়েছে তৃণমূলের রাজনীতিবিদদেরও। পাশাপাশি কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, দলে ও মন্ত্রিপরিষদে আছেন এমন কিছু নেতাদের। এর মূল কারণ যাতে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দলের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবার সংগঠনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করছেন তারা।

সম্পাদকমণ্ডলীর দু’জন নেতা বলেন, ‘সর্বোপরি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ঘোষিত এ কমিটি নির্বাচনমুখী করা হয়েছে। দলকে সুসংগঠিত করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দেওয়াই হল নতুন কমিটির অন্যতম টার্গেট। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, এবারের কমিটিতে যারা এসেছেন তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডেই বেশি ব্যস্ত রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সরকারের দায়িত্ব পালন শুধু মন্ত্রীরাই করবেন, এজন্যেই দলীয় নেতৃত্বে এবার মন্ত্রীদের রাখা হয়েছে কম।’

জানা গেছে, এরই মধ্যে ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢেলে সাজানো হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। ২২-২৩ অক্টোবর ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তিন দফায় দলটির নব-গঠিত কমিটি বিশ্লেষণ করে এমনটাই পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের নব গঠিত কমিটিতে অপেক্ষাকৃত প্রবীণদের বাদ দিয়ে নবীনদের স্থান করে দেওয়া হয়েছে। ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির এখন পর্যন্ত ৭৪টি পদে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জনই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে একেবারে নতুন মুখ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ের পরিবর্তন তেমন দৃশ্যমান না হলেও সম্পাদকমণ্ডলীতে এসেছে একাধিক তরুণ নেতৃত্ব।

জানা গেছে, খুব শিগগিরই মন্ত্রিসভাতেও রদবদল আনা হবে। দলের দায়িত্বে রয়েছেন এমন দুই/একজন নেতাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। যারা দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন তারা যাতে দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত শুক্রবার গণভবনে সভাপতিমণ্ডলীর এক সভা শেষে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভায়ও রদবদল করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার বলেছেন, বঙ্গবন্ধু দলীয় কাজে সময় দিতে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।’

জানা গেছে, নব গঠিত কমিটিকে সারাদেশ সফরে নামাবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে কেন্দ্রীয় নেতারা দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করবেন। পাশাপাশি জনগণের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে অবহিত করবেন। এ কাজগুলো খুব দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করতে চান দলের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করে আনাই এ কমিটির অন্যতম টার্গেট। দলীয় সভাপতি সে ভরসা করেই এক ঝাঁক নতুন নেতৃত্বকে দায়িত্ব দিয়েছেন। দলের কাজ যাতে ভালভাবে করতে যারা মন্ত্রী তাদের দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। বিস্তারিত জেনে-শুনেই এবারের কমিটি দেওয়া হয়েছে।’



/এমও/