কারও চিকিৎসার নামে জনগণকে জিম্মি করা যাবে না: কাদেরের হুঁশিয়ারি

বিএনপির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই—কারও চিকিৎসার নামে জনগণকে জিম্মি করা যাবে না। কোনও ইস্যু সৃষ্টি করে শান্তি-শৃঙ্খলাভঙ্গ, নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করবে।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবিরোধী এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে প্রতিহত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান ও সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। যারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে—আমরা তাদের সমুচিত জবাব দিবো।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়ার দাবির জবাবে কাদের বলেন, সংবিধান ও আইন দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক নিয়ম-নীতির মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার সবটুকু সুযোগ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার মানবিক হৃদয়ের কল্যাণে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও খালেদা জিয়া বাসায় থাকছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ পাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, হতে পারে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আইনের চোখে তার বর্তমান পরিচয় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা প্রধানমন্ত্রীর উদারতাকে প্রতিহিংসা বলতে দ্বিধা করছেন না। বিএনপির কৃতজ্ঞতাবোধ নিয়ে জনগণ প্রশ্ন তুলে। কিন্তু এই দেশের রাজনীতিতে তারা প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করার অভিযোগের জবাবে কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বলেছেন, বেগম জিয়াকে নাকি স্লো পয়জনিং করা হচ্ছে।’ আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই—দণ্ডপ্রাপ্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে বেগম জিয়া আজকে যে সুবিধা গ্রহণ করছেন এটা প্রধানমন্ত্রীর উদারতার কারণে। তার পাশে থাকেন আপনারা, ফখরুল সাহেবরা। তাকে যে খাওয়ায় সে পরিবারেই লোক। তার আশেপাশে সর্বক্ষণ ঘোরাফেরা করে বিএনপির লোকেরা। আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারের কেউ তার পাশে থাকে না। তার ব্যক্তিগত পছন্দের চিকিৎসকরাই চিকিৎসা দিচ্ছেন। আশপাশের লোকেরা সব বিএনপির—স্লো পয়জনিং যদি করে থাকে তাহলে তার আশেপাশের লোকেরাই করতে পারে। হুকুমের আসামি শেখ হাসিনা হবেন না, হলে ফখরুল সাহেব—আপনি হবেন।

মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, আপনাদের পছন্দের লোকেরা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এখানে আওয়ামী লীগকে জড়াচ্ছেন কেন? শেখ হাসিনা কেন হুকুমের আসামি হবে। আর বেগম জিয়াকে মাইনাস করার জন্য আপনারা স্লো পয়জনিং করছেন কিনা, নাকি সেই রকম কিছু করবেন বলেই উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে আওয়ামী লীগের ওপর, শেখ হাসিনার ওপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছেন?

মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেগম জিয়ার জন্য এখন এত মায়াকান্না কাঁদেন। কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করেন। তার জন্য দেখবার মতো কার্যকর ও অর্থবহ একটা মিছিল রাজপথে করার দুঃসাহস আপনাদের ছিল না। এটা দেখাতে পারেননি। কোন মুখে তার জন্য মায়াকান্না কাঁদছেন, লজ্জা করে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের কোনও দায় নেই। কোনও কিছু হলে এর দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। মির্জা ফখরুল সাহেবদের নিতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, অসীম কুমার উকিল, আবদুস সোবহান গোলাপ, ওয়াসিকা আয়শা খান, শাম্মী আহমেদ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, বিপ্লব বড়ুয়া, দেলোয়ার হোসেন, সায়েম খান, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।