‘ঈদে এক-দুই টাকা পাওয়া ছিল খুবই আকর্ষণীয়’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ ষাটের দশকের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের এই নায়কের শৈশব কেটেছে ভোলার গ্রামের বাড়িতে। সেই সময়ের ঈদের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ছোট সময়ে ঈদ ছিল অন্যরকম। আমরা ঈদের বকশিস হিসেবে এক টাকা দুই টাকা পেতাম। এটাই ছিল আমাদের বড় প্রাপ্তি।’ 

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ওই সময়টা  ছিল মধুর। সোনালি দিন। ঈদের দিনে আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে পুকুরে গোসল করে নতুন জামাকাপড় পরে নামাজ পড়তে যেতাম। ঈদের নামাজ আদায় করে দল বেঁধে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে যেতাম। তারা আমাদের আদর করে আপ্যায়ন করাতেন। মিষ্টান্ন খেতে দিতেন। খাওয়ানোর পর আমাদের হাতে এক টাকা দু’টাকা করে দিতেন। এই অর্থ প্রাপ্তিটা আমাদের জন্য ছিল খুবই আকর্ষণীয়। আমরা ভীষণ খুশি হতাম।’

‘ওই সময়টার ঈদ ছিল অনেক ভালোবাসা আর আনন্দের’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা আজকের দিনে চিন্তাই করা যায় না। তখন আমার গ্রাম ছিল অন্ধকার। রাস্তাঘাট ছিল না। আজকে সেই গ্রামের খ্যাতি হয়েছে। মানুষের দালানকোঠা হয়েছে। টাকা পয়সা হয়েছে। রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। বিদ্যুতের বাতি জ্বলছে।’

‘তবে ওই সময়ের মতো আন্তরিকতা আর নেই। একে অন্যের প্রতি যে সহমর্মিতা—এটা এখন হারিয়ে গেছে’ মনে করেন তোফায়েল আহমেদ। তার ভাষ্য, ‘এটা ভাবলে দুঃখ লাগে, খারাপ লাগে। আগের ঈদের দিনগুলো ছিল সত্যিই মধুর দিন। এখন কি আগের মতো সেই দিন আছে? কেউ কি কারও বাড়ি যায়? আধুনিকতা দিয়েছে অনেক কিছু, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আমাদের হৃদয়টাকে।’

সামাজিক মূল্যবোধ কমে যাওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ করে সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ছোট সময়ে ঈদসহ বিভিন্ন পার্বণে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ছিল। এখন সেটা দেখা যায় না। এখন মানুষের মধ্যে রেষারেষি, অন্যের সম্পত্তি জোর করে ভোগ করার প্রবণতা, সেই হৃদ্যতা ম্লান হয়ে গেছে।’

দীর্ঘদিন ঢাকায় থিতু হলেও এই নেতা আগাগোড়াই গ্রামের বাড়িতে ঈদ পালন করেন বলে জানান। পিতা-মাতা বেঁচে থাকতে ঈদের সময়ে তাদের সঙ্গে কাটাতেন এই নেতা।

১৯৭০ সালে পিতা মারা যাওয়ার পর শত ব্যস্ততার মাঝেও গ্রামের বাড়িতে মায়ের সঙ্গেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, কারাগারে থাকার সময়টা বাদে সব ঈদ তিনি ভোলায় মায়ের সঙ্গে উদযাপন করেছেন। ২০০৬ সালে মায়ের মৃত্যুর পরও তিনি ভোলায় ঈদ পালন করেন।

মায়ের নামে গড়ে তোলা ‘ফাতেমা খানম মসজিদ’ কমপ্লেক্সে নামাজ আদায় করেন তোফায়েল আহমেদ। পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করেন। এছাড়া ঈদের সময় তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে করোনার কারণে গত দুই বছর ভোলায় ঈদ পালন করতে পারেননি বলে জানান তিনি।