জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান: হানিফ

জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে জিয়াউর রহমান দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান নামে মুক্তিযোদ্ধা, চেতনায় পাকিস্তানি ছিলেন। তাই দালাল আইন বাতিল করে সাড়ে ১১ হাজার রাজাকারকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গেছেন।’

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এক নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের স্ত্রী-সন্তানের রাজনীতি নিষিদ্ধ, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ড, জঙ্গি মদত ও নাশকতার প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশটির আয়োজন করে ‘অপরাজেয় বাংলা’ ঢাকা মহানগর উত্তর।

হানিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের সব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একটি উন্নত ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের সেই স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর ৪৭ বছর পার করেছে। অনেকে উতাল-পাতাল হয়েছে। পৃথিবীর কোনও দেশে স্বাধীনতার পরে যুদ্ধাপরাধীর দলের সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ নেই, দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করে যাচ্ছে। এই সুযোগ কারা করে দিয়েছে। জিয়াউর রহমান জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশের সমাজকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে গেছেন। এক পক্ষে জাতির পিতার হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ, আরেক দিকে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতারবিরোধী পক্ষ।’

জামায়াতে ইসলামী একাত্তর সালে রাজাকার ছিল, এখনও রাজাকার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা এখনও এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। ২০১৩ সালে তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসিতে দেশের মানুষ খুশি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছিল। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আহমদ বলেছিলেন, কাদের মোল্লা, নিজামী, মুজাহিদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর তারা কীভাবে পাকিস্তানের সৈনিক থাকে? মতিউর রহমান নিজামীকে বেসামরিক সর্বোচ্চ নেসার-ই পাকিস্তান দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা পাকিস্তানের পক্ষের রাজনীতি করে। এ দেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। আমরা আশা করি, সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ হবে।’ 

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘পাকিস্তানের দোসর বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তাদের নেতা লন্ডনে বসে বলেছে—টেক ব্যাক বাংলাদেশ। টেক ব্যাক বাংলাদেশ মানে তো পেছন দিকে নিয়ে যাওয়া। মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে জানতে চাই, আপনারা কোন পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল নাকি একাত্তরের আগের পাকিস্তান। কোনটায় নিয়ে যেতে চান, এটা আগে জাতির কাছে পরিষ্কার করুন। আপনারা এখনও মনেপ্রাণে পাকিস্তানি আদর্শ ধারণ করেন। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখলে তা আপনাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হবে। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি ধ্বংস করার জন্য নয়। এমন কোনও শক্তি নেই বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে পারে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা প্রমাণ করেছি, আবারও করবো।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সালে নিয়ে যেতে চান! এ দেশের মানুষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল দেখেছে। কী ছিল? কী করেছিলেন আপনারা? বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। ৬০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো। শিক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি খাতকে ধ্বংস করেছিলেন। সেই বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চান?’

হানিফ বলেন, ‘হাওয়া ভবন বানিয়ে আপনাদের নেতা তারেক রহমান কমিশন বাণিজ্য করেছে। আর সন্ত্রাসীদের দিয়ে গণহত্যা চালিয়েছিল। আপনাদের তিন-চার জন যুবদল নেতা মারা গেছে বলে আন্দোলন করেন। অথচ আপনাদের হাতে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছিল। তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার, কোথায় ছিল গণতন্ত্র, আইনের শাসন?’

নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিএনপি সেই সময়ে আন্দোলন শুরু করেছে। তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার জন্য নীলনকশা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যতদিন থাকবে, ততদিন আলোকিত থাকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আর কোনও বিকল্প নেই।’

অপরাজেয় বাংলা’র প্রধান উপদেষ্টা সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পরে কুখ্যাত রাজাকারের ছেলেদের এত বড় স্পর্ধা কোথা থেকে এসেছে? খুনি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদের রাজনৈতিক, আর্থিকভাবে বহাল করেছিল। যার কারণে তারা আবার ধর্মীয় রাজনীতি শুরু করেছে। রাজাকারপুত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাকিস্তান ভালো ছিল। তোরা কেউ বাংলাদেশ চাসনি। তোরা পাকিস্তান চলে যা।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘হুমকি দেবেন না। আপনারা গণতন্ত্রকে নিয়ে কথা বলেন, আমাদের ভালো লাগে। কারণ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কিন্তু আপনাদের দেউলিয়াপনা এতদূর গেছে যুদ্ধাপরাধীদের বাচ্চাকে মঞ্চে তুলে ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দেন। এটা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। যারা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেছে, তাদের নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তাও করবেন না, চোখ উপড়ে ফেলবো।’

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অপরাজেয় বাংলা ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ফরিদুর রহমান খান ইরানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন—সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শিল্পী মনিরুজ্জামান মুনির, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য রাশেক রহমান, যুবলীগের নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। এছাড়াও নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অপরাজেয় বাংলার সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু।