কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ‌

কমিটি নেই ৩৯ মাস, টিকে আছে ব্যানার-ফেস্টুনে

কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সবশেষ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই। দীর্ঘ ৩৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কমিটি গঠন করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ফলে নেতৃত্বহীন হয়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ও বেহাল হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী কলেজটির ছাত্র সংগঠনটি। বর্তমানে শুধু ব্যানার-ফেস্টুনেই টিকে আছে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ।

কমিটি গঠন না করায় নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি এর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। এরই মধ্যে কমিটিতে পদপ্রত্যাশী অনেক ছাত্রনেতা রাজনীতি থেকেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। বেশ কয়েকজন সাংসারিক জীবনেও প্রবেশ করেছেন। আর যে কয়েকজন এখনও সক্রিয় রয়েছেন, তারাও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে কমিটি না থাকায় কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সম্মেলনের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের অর্ধশতাধিক সিভি জমা পড়লেও বর্তমানে হাতেগোনা অল্প কয়েকজন এখন পর্যন্ত সেই দৌড়ে টিকে আছেন।

অন্যদিক কবি নজরুল কলেজ ক্যাম্পাসে অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বেশ সচল রয়েছে। ইতোমধ্যে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের ৩০২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ায় বেশ শক্ত অবস্থানে আছে তারা। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনও ভালোভাবেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে কমিটি না থাকায় কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্যানেলের কর্মী ও বহিরাগতরা নিজেদের পদধারী সাবেক নেতা দাবি করে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় মাঝেমধ্যেই বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে কিছুটা আতঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এমনকি চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকজন নামধারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। যার ফলে ঐতিহ্যবাহী গৌরবময় ইতিহাসের এই ছাত্র সংগঠনটির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রাকিব বলেন, সম্মেলনের তিন বছর শেষ হয়ে গেছে আরও তিন মাস আগে। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে আমরা অভিভাবকহীন অবস্থায় আছি। ক্যাম্পাসে সবচেয়ে সক্রিয় এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মতো সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কিন্তু দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ সাংগঠনিক কার্যক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমরা চাই কমিটি হোক এবং আমাদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যক্রম পূর্বের মতো সচল হোক। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখে অবিলম্বে কমিটি ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন নেতৃত্বহীন অবস্থায় থাকায় দীর্ঘদিন নেতৃত্বহীন অবস্থায় থাকায় ছাত্রলীগের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী ছিল। বর্তমানে হাতে গোনা অল্প কয়েকজন মাঠে আছেন। বাকিরা রাজনীতি ছেড়ে নিজেদের মতো আছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নিষ্ঠার সাথে রাজনীতি করে আসছে, ছাত্রলীগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে আসছে, কমিটি না দিয়ে তাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।

কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ফোনে একাধিকবার কল করে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে আগামী ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি এর আগে কমিটি গঠন না হওয়ায় যোগ্যদের পদবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা।