নীলক্ষেতে পথচারীদের মোবাইল চেক করছে ছাত্রলীগ

রাজধানীর নীল‌ক্ষেত মো‌ড়ে পথচারীদের মোবাইল ফোনের মেসেজ চেক করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কারও ফোনে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের মারধর ক‌রে পু‌লিশের কা‌ছে তু‌লে দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নীলক্ষেতে ছাত্রলীগ কর্মীদের এমন তল্লাশি চালাতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, প্রবেশপথগুলোতে পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পথচারীদের মোবাইল, আইডি কার্ড চেক করছে ছাত্রলীগ। কারও ফোনে ‘সন্দেহজনক’ কিছু পেলে মারধর করে পুলিশের সাথে তুলে দিচ্ছে তারা।

ভুক্তভোগীরা জানান, ফেসবুকে যদি কোনও ধরনের বিএনপি রিলেটেড পেইজে লাইক পাওয়া যায় তখন ছাত্রলীগের জেরার মাত্রা বেড়ে যায়। ছবি বা পোস্ট পাওয়া গেলে শুরু হয় মারধর। সম্মিলিতভাবে কিল ঘুষি এবং লাথি দিতেও দেখা যায়।

পথচারীদের অনেকেই প্রশ্ন করেন, মোড়ে মোড়ে সাধারণ নাগরিকদের পথরোধ করে যানবাহন থেকে থামিয়ে ছাত্রলীগের তল্লাশি করার আইনি ভিত্তি আছে কিনা?

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির ভাষা হিসেবে আগুনকে ব্যবহার করা, রাজনীতির ভাষা হিসেবে হত্যাযজ্ঞকে ব্যবহার করা; এসবের প্রতিবাদে আমরা অবস্থান করছি। এটি রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, সেখানে সাংস্কৃতিক আয়োজনও রয়েছে। মিছিল-মিটিংয়ের মধ্যে আমাদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর বাইরে কোনও কর্মকাণ্ডের সাথে বাংলাদেশে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই।’

এর আগে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্পট ও তার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করছে হাইকোর্ট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, প্রেসক্লাব এলাকায়।

সকাল থেকেই শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নেয় ঢাবির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আজিমপুরের পলাশী গোল চত্বরের পাশে অবস্থান নেয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগ, শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নেয় জসীম উদ্দিন হল ছাত্রলীগ, দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেয় ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগ, ফজলুল হক হল ছাত্রলীগ, অমর একুশে হল ছাত্রলীগ এবং নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেয় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও স্যার এফ রহমান হল ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ-2

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলক্ষেত মোড় দিয়ে বিএনপির সমাবেশ যেতে চাইলে অবস্থান নেওয়া জহুরুল হক ছাত্রলীগ ও স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সিএনজি থেকে নামিয়ে মারধোর করে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এখন পর্যন্ত নীলক্ষেত মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ এলাকা থেকে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও ক্যাম্পাস এলাকায় গাড়ি প্রবেশ করতে চাইলেই তল্লাশি চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। সন্দেহ হলেই মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। তবে এই বিষয়ে কথা বলতে চায়নি পুলিশ সদস্যরা।

ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজকের বিএনপি জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, আগুন সন্ত্রাসের প্রতিষ্ঠান। এগুলোর কারণে আমরা মনে করি গোটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ছাত্র সমাজের মাঝে এক অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছে গণতন্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে, রাজনীতির লাইসেন্স নিয়ে। আগুন সন্ত্রাস কখনো রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। যারা এই সন্ত্রাস কায়েম করতে চায় এদের প্রতিহত করতে হবে এবং বাংলার মাটি থেকে এদের মূল উৎপাটন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় ছেলেমেয়েরা আছি, তারা বহু লড়াই সংগ্রাম করে ও দেশনেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে একটি সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস পেয়েছি। আমাদের মায়েদের স্বপ্ন পূরণের সক্ষমতা আমরা পেয়েছি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ আমাদের বেড়েছে। এটিকে আমরা কখনও অনেক অনিরাপদ হতে দিতে পারি না।’

ঢামেক

এখন ‘অনির্বাচিত সরকারকে’ ক্ষমতায় আনতে দালালি চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতির নামে যারা দুর্নীতিবাজদের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের কঠোর হাতে প্রতিহত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে এদের বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। আমরা মনে করি এটি বর্তমান ছাত্র সমাজের প্রধানতম রাজনৈতিক কর্মসূচি। আমরা সেই জায়গা থেকে কাজ করার চেষ্টা করছি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’