বিএনপির ‘আন্দোলনের খেলা’ বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘তাদের এই আন্দোলন খেলা বাংলাদেশের মানুষ বহুবার দেখেছে। বহুদিন ধরে দেখছে, দেখে দেখে এখন ক্লান্ত হয়ে গেছে। এই আন্দোলন খেলে সরকারের কিছু করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। আপনারা কিছু করতে পারবেন না।’
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন হানিফ।
বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি করে যাচ্ছে, তাতে বিএনপিকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপিকে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। সংবিধান সম্মতভাবে অনুষ্ঠিত আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করুন। অন্যথায় যেভাবে অতীতে জনগণ দ্বারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, ভবিষ্যতেও আপনাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে। আপনাদের জনগণ আবারও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।’
বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেন হানিফ। তিনি বলেন, ‘তথাকথিত আন্দোলনের নামে যদি এরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারাই যথেষ্ট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবেই দমন করবে। এর পাশাপাশি প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সব সময় প্রস্তুত থাকবে। যেকোনও বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করার জন্য রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের পাশে থেকে সহায়তা করবেন।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার নেতৃত্বে হবে? কার নেতৃত্বে দাবি করছেন? আপনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ’৯৬ সালে বলেছিলেন, এই দেশে পাগল আর শিশু ছাড়া নিরপেক্ষ কেউ নেই। সেটা কী ভুলে গেছেন আপনারা? আজ আপনারা কোনও পাগল আর শিশুর নেতৃত্বে এই সরকার গঠন করার জন্য আন্দোলন করছেন? সেটাই আপনাদের কাছে জানতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ কোনও পাগল, শিশুর হাতে এই দেশের সরকারের দায়িত্ব দিতে পারে না। যে কারণে আপনাদের দাবি অনুযায়ী এই দেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না।’
হানিফ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। তিনটা নির্বাচনের পরেই আপনারা নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন। এই নির্বাচনগুলো অভিযোগমুক্ত ছিল না। এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে এই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেন, নিরপেক্ষ সরকার বলেন, কোনও সরকারের অধীনেই নির্বাচন অভিযোগমুক্ত নয়। তাহলে কেন আমরা সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না?’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ভারতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে উলফা নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেকের হাত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রক্তে রঞ্জিত। এদের দ্বারা কোনও ভালো কাজ হতে পারে না। এই দল দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে নয়। এই বিএনপি তাদের অপকর্মের কারণে বাংলাদেশে আর কখনও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ক্ষমতায় থাকতে অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন, বিরোধী দলে থাকতে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। এই পাপের দায়ভার আপনাদের বহন করতে হবে। খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার এসব পাপ বিএনপিকে বহন করতে হবে।’
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল দাবি করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বিএনপি বলছে দাম বাড়ছে, দাম বাড়ছে। এসব বলে ব্যবসায়ীদের খোঁচা দিচ্ছে দাম বাড়াতে। রোজার মাসে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে।’
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা।