তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না: মির্জা ফখরুল


মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ফাইল ছবিবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১২ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দলীয় তদন্তকারীর চক্রান্তে সাজানো মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এটা জানার পরেও কেউ কেউ দল থেকে তার পদত্যাগের যে পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের কাছে জনগণ প্রশ্ন করতে পারে, এত শত গুম, খুন করার জন্য দায়ী সরকারের পদত্যাগ কি তারা দাবি করেছেন? নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়কে যখন আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন ও বিএনপিকে দুর্বল করার অসৎ উদ্দেশ্য বলছি, তখন সেই রায়ের ভিত্তিতে আমাদের নেতা তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। আমরা আশা করি, ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা ক্ষমতাবান কারও তুষ্টির জন্য কারও বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো থেকে দায়িত্বশীল মিডিয়া বিরত থাকবে।’
বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন তোলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়িত্ব যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের হয় তাহলে বর্তমান সরকারের শাসনামলে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, হলি আর্টিজানে হত্যাকাণ্ড এবং জঙ্গি হামলায় নিহত বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইমাম-মুয়াজ্জিন, যাজক, পুরোহিত, ব্লগারসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের হত্যাকাণ্ডের দায় ক্ষমতাসীনদের ওপরই বর্তায়। কিন্তু রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই।’
রায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা’ বলে আদালতের পর্যবেক্ষণের যে খবর প্রচারিত হয়েছে, তাতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের হুবহু প্রতিফলন দেখে দেশের জনগণের মতো আমরাও বিস্মিত হয়েছি।’
ফখরুল বলেন, ‘আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্য হুবহু এক। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, জেলখানায় ৪ জাতীয় নেতার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘৃণ্য অপরাধকে একসূত্রে গাঁথার যুক্তি সঠিক হলে বিএনপি কিংবা বিএনপি পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপরাধী বলা হলো কোন যুক্তিতে? ১৯৭৪ সালে বিএনপির জন্মও হয়নি এবং ১৫ আগস্ট কিংবা ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের বিচারে কোনও আদালতই বিএনপি বা বিএনপির কোনও নেতাকে অভিযুক্ত, এমনকি সম্পৃক্তও করেনি।’
বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, ‘আদালতের পর্যবেক্ষণে বিরোধী দলের প্রতি সরকার ও সরকারি দলের প্রত্যাশিত আচরণ সম্পর্কে যেসব বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের আচরণের ঠিক বিপরীত। আমরা আশা করবো সরকার আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ মান্য করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি মিডিয়ার একাংশ এই রায় প্রকাশের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে মনগড়া কিছু তত্ত্ব ও তথ্য প্রকাশ করে তার সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
ফখরুল যোগ করেন, ‘২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত করতে তৎকালীন সরকারই মামলা দায়ের করেছে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এফবিআই এবং ইন্টারপোলকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করেছে এবং সর্বোপরি এই মামলার মূল আসামি মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করেছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে তৎকালীন সরকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। কাজেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা হয়েছে বলে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ, তা যুক্তিগ্রাহ্য কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুফতি হান্নানের বেআইনি দ্বিতীয় জবানবন্দি বাদ দিলে তারেক রহমান এবং অন্য অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকেই এই মামলায় অভিযুক্ত করা যেতো না। যৌক্তিক কারণেই একথা বলা যায়, প্রকাশ্য আদালতে মুফতি হান্নান যাতে তাকে দিয়ে জোর করে জবানবন্দিতে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে, এটা বলতে না পারেন সেজন্যই অন্য একটি মামলায় দ্রুততার সঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তাকে। আদালতের পর্যবেক্ষণে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির কোনও উল্লেখ না থাকাও বিস্ময়কর এবং সন্দেহমূলক।’