অক্টোবরেই কর্মসূচি দিতে চায় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাবিএনপি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শিগগিরই কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে চায়। দুই-একদিনের মধ্যে বৈঠকে বসার সম্ভাবনা রয়েছে। শরিক দলগুলোর নেতাদের প্রত্যাশা, অক্টোবরেই শারদীয় দুর্গাপূজার পর রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে জেলা-জেলায় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি থাকবে।

প্রসঙ্গত, বিকল্প ধারাকে বাইরে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে শনিবার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই ঐক্যপ্রচেষ্টার শুরু থেকেই দলটির সভাপতি বি. চৌধুরীকে সামনে রেখে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার জোট হওয়ার পর থেকে জটিলতা তৈরি হয়। এই জটিলতা শেষ পর্যন্ত দলটিকে বৃহত্তর ঐক্য থেকে ছিটকে ফেলে। যদিও দলটির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোনও ঐক্য তারা করবেন না। পাশাপাশি এককভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর ষড়যন্ত্রেও তারা নেই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশকালে ঐক্যের বাইরে যারা আছে, তাদের জন্য নেতারা দরজা খোলা রাখার আহ্বান জানালেও আদতে বি চৌধুরীকে আর না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। যদিও এ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে স্বস্তিও আছে। জোট-নেতারা চাইছেন, জোটের আত্মপ্রকাশের পর কার্যকরভাবে কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসা। এক্ষেত্রে বিএনপির বাইরে বাকি শরিক দলগুলো আন্দোলনে নামার আগেই নির্বাচনে কী ছাড় দেবে বিএনপি এবং নির্বাচিত হওয়ার পর প্রক্রিয়া কী হবে, এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা সেরে ফেলতে চাইছে। তবে বিএনপি এই দুটি বিষয়ে আলোচনা আরও দীর্ঘায়িত করতে চায়। এর ফলে শরিক দলগুলোর ওপর দলীয় কৌশল অবলম্বন করা সহজ হবে, এমনটি মনে করছেন দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা হয়েছে। এরপর তো আমাদের কোনও বৈঠক বা সভা হয়নি। তবে আগামীতে বৈঠক করে আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কবে আমাদের পরবর্তী বৈঠক হবে, সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি জানি না।’

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে কর্মসূচি, নির্বাচনসহ নানা বিষয় আলোচনায় থাকবে। তবে কর্মসূচি নির্ধারণ সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাবে। কর্মসূচির মধ্যে প্রাথমিকভাবে জেলায়-জেলায় সমাবেশ, ঢাকায় সমাবেশ থাকতে পারে। আর এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যেও।

রবিবার সন্ধ্যায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বসে ঠিক করবো কী কর্মসূচি দেওয়া যায়। জেলায়-জেলায় সমাবেশ করতে পারি। শারদীয় দুর্গাপূজার পরই আশা করছি কর্মসূচি দেওয়া যাবে। বড় কর্মসূচিতে আমি যাবো।’

ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাহেদ উর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহত্তর পর্যায়ের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি হবে দুর্গাপূজার পর। কর্মসূচি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ২-৩ দিনের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা একসঙ্গে বসবেন।’

এদিকে, আগামী দুদিন পেশাগত ব্যস্ততায় সময় কাটবে বি চৌধুরীর। আগামী মঙ্গলবার নাগাদ পরবর্তী কৌশল নিয়ে আলোচনায় বসতে পারেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

এ বিষয়ে শনিবার রাতে মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রকৃত জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত এর ফল জাতির সামনে প্রকাশিত হবে।’

বিকল্প ধারার একটি সূত্র বলছে, দলটির পক্ষ থেকে বিএনপির কয়েকজন সংস্কারপন্থী নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, তাদের পরবর্তী কার্যক্রমে কীভাবে যুক্ত করা যায়, এ নিয়েও চিন্তা করছে বিকল্প ধারা। বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার বাইরে সরকারবিরোধী দলগুলোকে কেন্দ্র করে তাদের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।