এই ধরনের নির্বাচনি পরিবেশ কখনও দেখিনি: মির্জা ফখরুল

‘১

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছে সরকার এবং আমরা কখনও এই ধরনের নির্বাচনি পরিবেশ দেখিনি।’ নজিরবিহীনভাবে সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের গ্রেফতার করছে। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে।’ রবিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় দিবসের র‌্যালির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রবিবার (১৬ ডিসেম্বর) পুলিশের পরিবর্তিত সময় ও বেঁধে দেওয়া সীমানার মধ্যে বিজয় র‌্যালি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বেলা ৩টায় র‌্যালি করার কথা থাকলেও সকাল ১১টা ৪৫মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি বের করা হয়, যা শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে এই বিজয় র‌্যালির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে র‌্যালি হলেও, এটি নির্বাচনি প্রচারণায় রূপ নেয়। র‌্যালিতে রাজধানীর বিভিন্ন আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের হাতে ছিল দলটির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।

1243

র‌্যালিতে জাতীয় পতাকা, দলের প্রতীক ধানের শীষ হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক। র‌্যালির প্রথমভাগে ছিল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের মিছিল।

এই শোভাযাত্রায় নয়াপল্টন থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। শান্তিনগর মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওইখানে মিছিলটির সমাপ্তি টানেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে, যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং নিজে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিৎ ছিল, আমাদের আনন্দের উৎসবের। কিন্তু আমরা অত্যন্ত ভরাক্রান্ত, আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত- দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে-কি থাকবে না তা নিয়ে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে, কমিশন যে তফসিল দিয়েছে, তাতে এটা প্রতিয়মান হয় যে, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, না গণতন্ত্রে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ করবে, নাকি ভোগ করবে না। নির্যাতিত হয়ে স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে যাবে, নাকি বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের দিকে যাবে। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে, গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্ত করতে পারবো-কি পারবো না।’

নির্বাচনি প্রচারণাকালে ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন অভিহিত করে ফখরুল বলেন, ‘একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সরকার কিছুই করে না। নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর ওপরে গতকাল হামলা হয়েছে। তাকে প্রচারণা করতে দেয়নি। ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের নির্বাচনি এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

4567

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে আমাদের এই র‌্যালি করতেও বাঁধা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের র‌্যালি ছিল দুপুর ২টায়। সেটাকে তারা (পুলিশ) পরিবর্তন করে সকাল ১০টায় নিয়ে এসেছে। এজন্য এটা করা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিল। তারপরও নানা বাঁধার মধ্যে যারা এই র‌্যালিতে যোগ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

সরকারকে হুঁশিয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই গ্রেফতার বন্ধ করুন। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। গণতন্ত্র ধ্বংস করার দায়-দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করবেন না। এভাবে হামলা-মামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা-গুম করে নির্বাচন থেকে জনগণকে বিরত রাখতে পারবেন না।’

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক সম্বোধন করে বলেন, ‘আমি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আপনারা সবাই অবগত আছেন, এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছি। যারা ক্ষমতাসীন আছেন, তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আবারও ক্ষমতায় থাকার জন্য ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যাতে আমরা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেই।’

এসময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটা বিজয়ের দিন, আর আমরা একটা লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এই লড়াই ভোটের লড়াই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের নামে প্রতারণা হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, ভোট হওয়ার আগেই ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই থেকে গত পাঁচ বছরে দেশে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচন ক্ষমতাসীনরা ছিনতাই করেছেন, জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি।

মান্না বলেন, ‘নতুন যখন নির্বাচন আসলো, তারা মনে করেছিল যে, এই নির্বাচনটাতেও বোধ হয় তারা ওয়াকওভার নিতে পারবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার ওয়াকওভার দেবো না, আমরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছি, প্রার্থী দিয়েছি। এতে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’

শোভাযাত্রায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।