ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ইসির ‘শেষ পরীক্ষা’ নেবে বিএনপি

বিএনপি-ডিএনসিসি-ডিএসসিসিঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচন সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য না হলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর অধীনে আর কোনও নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন পরিস্থিতি পরীক্ষা করতে চান তারা। এক্ষেত্রে ঢাকা সিটি ভোটে বিগত দিনের মতো অভিজ্ঞতা হলে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ছেড়ে দেওয়া শূন্য আসনে (ঢাকা-১০) উপনির্বাচনেও অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে বিএনপি। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনের ধরন ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দলের মধ্যে আগাম ধারণা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টরা নতুন কৌশল নেবেন—এমন আশঙ্কা করছেন বিএনপির নেতারা। গত ২৫ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ঢাকা সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।’

গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি ভোটে কারচুপি বা আগেই ভোট দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পেলে ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচন থেকে বিরত থাকবে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দলের চর্চাই হচ্ছে নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি, কেন নিচ্ছে এই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন দলের মহাসচিব। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করতে চায় বিএনপি। এ কারণেই নির্বাচনে যাচ্ছি আমরা। সরকার বা নির্বাচন কমিশন ভোট চুরি করছে, এটা তো মানুষ জানবে না, বিএনপি নির্বাচন করে বলেই জানে। আমরা বারবার প্রমাণ করবো, এই সরকার ভোট চুরি করে।’

প্রসঙ্গত, বুধবার (১ জানুয়ারি) ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাদের প্রশ্ন করেন, কেন আমরা সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। অনেক বলেছেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে না গিয়ে আমরা ভুল করেছি। সেই কারণে ২০১৮ সালে নির্বাচনে ‍গিয়ে প্রমাণ করেছি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন আমরা সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বারবার প্রমাণ করতে চাই, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফল প্রত্যাখ্যান করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনও নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি।

দলটির একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে আপত্তি বিএনপির শুরু থেকেই। ২০১৭ সালের ২২ মে ইভিএম’র বিরোধিতা করে ইসিকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে ইভিএম পরিত্যাগ করছে, সেখানে বাংলাদেশে তা চালু করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে, এখানে ডিজিটাল কারচুপির শঙ্কা রয়েছে। ইভিএম চলবে না বলে মন্তব্য করে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর দলের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের সমাবেশে খালেদা জিয়া ইভিএম বন্ধ করার দাবি করেছিলেন। গত ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেছেন, ‘ইভিএমে নির্বাচনের ফল পাল্টানো ও কারচুপির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘আগে ঢাকা সিটির ভোট হোক।’ এরপর বিএনপি উপনির্বাচনে অংশ নেবে কিনা ভেবে দেখবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।