মওদুদ আহমদের কফিন হাতে শোকার্ত বিএনপি

উন্নত চিকিৎসা নিতে স্ত্রী হাসনা মওদুদ জসীমউদদীনকে সঙ্গে নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। যদিও সব চেষ্টার সমাপ্তি ঘটিয়ে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) স্থানীয় সময় সাড়ে ছয়টায় পরপারে পাড়ি দেন বাংলাদেশের আইন জগতের খ্যাতনামা এই প্রবীণ রাজনীতিক।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যা ছয়টায় দেশে ফিরেছে তার মরদেহ। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর মরদেহ গ্রহণ করতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খানসহ অসংখ্য নেতাকর্মী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলছিলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে। পিনপতন নীরবতা আর শোকাবহ পরিস্থিতিতে তার মরদেহ গ্রহণ করেন তারা। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার কফিনে।’

বিমানবন্দর থেকে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষে মওদুদ আহমদের মরদেহ নিয়ে গুলশানে তার বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন নেতারা। সেখানে কিছু সময় রাখার পর রাতে এভার কেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে মওদুদ আহমদের মরদেহ। এরপর শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর সকাল ১০টায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা হবে।
বিমানবন্দর থেকে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল জানান, মওদুদ আহমদের মরদেহ গ্রহণ উপলক্ষে বিমানবন্দরে বিএনপির সিনিয়রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিকাল সাড়ে চারটা থেকেই বিমানবন্দর এলাকায় নেতারা একে একে উপস্থিত হন। জ্যেষ্ঠ নেতারা একত্রে স্মৃতিচারণ করছিলেন মওদুদ আহমদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, ডা. জাহিদ হেসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন প্রমুখ।

বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। মওদুদ আহমেদ চলে যাওয়ায় সমগ্র জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমি মনে এটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য ক্ষতি হয়েছে।’

বিএনপির দফতর বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে,  শুক্রবার সকাল ১১টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মওদুদ আহমদের জানাজা ও দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর হেলিকপ্টারে নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে তার মরদেহ। দুপুর আড়াইটায় নোয়াখালীর কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে, বিকাল ৪টায় বসুরহাট কোম্পানীগঞ্জ সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয় মাঠে ও বিকাল সাড়ে ৫টায় মরহুমের নিজ বাসভবনের (মানিকপুর, কোম্পানীগঞ্জ) সামনে মরহুমের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে, বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন করা হবে।

১৯৪০ সালের ২৪ মে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন মওদুদ আহমদ। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাস করে লন্ডনে লিঙ্কন্স ইন থেকে ‘বার-অ্যাট-ল' ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশোনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন মওদুদ আহমদ।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭-৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন মওদুদ আহমদ। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি, আইনমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।