‘বিএনপির ৫ হাজার নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত’

সারা দেশে বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, গত তিন দিন আগে পর্যন্ত হিসাব—সারা দেশে করোনায় বিএনপির চার শতাধিক নেতাকর্মী মারা গেছেন। আর পাঁচ হাজার নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত আছেন। তিনি এও জানান, থানা ও ইউনিয়ন থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছেন।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব তথ্য জানান। মির্জা  ফখরুল বলেন, ‘আবারও বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হবে। গত বছরের মতো বিএনপির সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের পক্ষ থেকে যেসব সেবা দেওয়া হয়েছিল, সেটি এবারও চলমান থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘শুরু থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারের অসহায়ত্ব ও চরম সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। জাতীয় পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কোনও সমন্বয় ছিল না। পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না। লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। পোশাক শিল্পের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবগত নয়। কোভিড ও নন-কোভিড হাসপাতাল নির্ধারণ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম ছিল চরম হতাশাব্যঞ্জক।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করা হয়নি। তাছাড়া হাসপাতালকে কোভিড-নন কোভিড চিহ্নিত করে আলাদা না করায় দেশে স্বাস্থ্যসেবায় চরম নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। করোনা রোগীরা যেমন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি, তেমনি সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। মানুষ রাস্তায়, ভ্যানে, অ্যাম্বুলেন্সে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে সেবা না পেয়ে বেশুমার জীবন দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইসিইউ, ভেনটিলেটর, হাইফ্লো অক্সিজেন ইত্যাদি স্বল্পতায় আক্রান্তদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও হতাশা পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব সংকটে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থার কোনও উত্তরণ ঘটেনি। দেশের অন্তত ৪৬টি জেলায় যথাযথ চিকিৎসার সুবিধা সংবলিত আইসিইউ, হাইফ্লো অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা এক বছরেও গড়ে তোলা হয়নি। দেশের ৭৯টি সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতায় ৫০ শতাংশ অগ্রগতিও হয়নি এক বছরে।’

‘বেসরকারি হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরীক্ষা ছাড়া রিপোর্ট প্রদান করে রিজেন্ট-জেকেজিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসা সেবায় ভুতুড়ে বিলের বিষয়গুলো তো গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। একঘণ্টার অক্সিজেন বিল ৮০ হাজার টাকা, চিকিৎসা ব্যয় লাখ লাখ, টাকা এগুলো সংবাদ মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি। করোনাকালে একদিকে করোনা আক্রান্ত রোগী ও তাদের পরিবার-পরিজনদের চিকিৎসা না পাওয়ার আহাজারি, অপরদিকে লাখো-কোটি কর্মহীন মানুষের মানবেতর দিনযাপনের গ্লানি বাংলাদেশের বাতাসকে ভারি করে তুললেও সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী নামধারী দুর্বৃত্ত লুটে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা।’

আরও পড়ুন:

করোনা মোকাবিলায় জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান বিএনপির