ম্যান্ডেট নিচ্ছেন খালেদা

খালেদা জিয়াচেয়ারপারসন পদে এবার দলের নেতাকর্মীদের ম্যান্ডেট নেবেন খালেদা জিয়া। এজন্য শিগগিরই চেয়ারপারসন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একাধিক প্রার্থী না থাকলে কাউন্সিলের আগেই খালেদা জিয়াকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। একাধিক প্রার্থী ওই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বিষয়টি জাতীয় কাউন্সিলে পাঠানো হবে।
দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রমতে, জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। তবে সরকার ‘ষড়যন্ত্র’ করতে পারে, এ আশঙ্কায় নেতারা বিষয়টি গোপন রাখতে চাইছেন।
এ প্রতিবেদককে বেশ কয়েকজন নেতা এ বিষয়ে না লেখার অনুরোধ করেন। তাদের মতে, এটি গোপন থাকাই ভালো। নির্বাচন যখন হওয়ার হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি এখনই কিছু বলতে পারছেন না। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই থাকবেন। নির্বাচন একটি কনভেনশন বা নিয়মমাত্র। তিনি বলেন, চেয়ারপারসন পদে নির্বাচন দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে বা পরেও হতে পারে। দলের যুগ্মমহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান বলেন, এ নিয়ে ফোনে আলাপ না করাই ভালো। যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, আসলে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষণা হওয়ার পরে সাধারণত নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এখনও কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন পদে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কাউন্সিলের আগে। ওই সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন দলের প্রবীণ নেতা টিএইচ খান। এরপর ২০১৩ সালে আবারওা দলের কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং চেয়ারপারসন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয় বিচারপতি টিএইচ খানকে। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে শেষ পর্যন্ত ওই নির্বাচন এবং কাউন্সিল কোনওটিই অনুষ্ঠিত হয়নি।
সূত্রমতে, এ বছর আবারও দলের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৬ মার্চের আগে যেকোনও সময় বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগেই তারা ওই কাউন্সিল সম্পন্ন করতে চায়। দলটির নেতাদের মতে, আওয়ামী লীগ যেহেতু কাউন্সিল করছে; তাই নৈতিকভাবে বিএনপির কাউন্সিলে তারা বাধা দিতে পারবে না।
বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এবার দলটি এই ভেন্যুসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ, এই তিন জায়গায় কাউন্সিলের জন্য অনুমতি চাইবে।
নিয়মানুযায়ী দলের স্থায়ী কমিটি বা দলীয় ফোরামের যে কোনও একটি বৈঠকের পর চেয়ারপারসন পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের প্রবীণ একজন নেতাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আরও কয়েকজনকে সদস্য করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ওই কমিশন নির্বাচনের একটি তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী পদের জন্য মনোনয়ন ফরম কেনা এবং তা পূরণ করে কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের যেকোনও একজন নেতা ফরম কিনে তা জমা দেন। এরপর ওই ফরম যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহারসহ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ। চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া একক প্রার্থী হলে কাউন্সিলের আগে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। একাধিক প্রার্থী হলে বিষয়টি পাঠানো হবে জাতীয় কাউন্সিলে। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিএনপিতে চেয়ারম্যান বা সভাপতি পদে একাধিক প্রার্থীর নির্বাচন করার নজির নেই।
বিএনপির গঠনতন্ত্রে তিন বছর পর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা বলা আছে। একইভাবে চেয়ারপারসনের মেয়াদের কথাও বলা আছে তিন বছর। কিন্তু ৮ (ক) ধারায় এও বলা আছে যে, নির্বাচিত পরবর্তী চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত আগের চেয়ারম্যানই দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে ছয় বছর কাউন্সিল না হলেও খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন পদে বহাল আছেন।

/এফএ/