পরীমণিকে গ্রেফতারের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি এমপি হারুনের

পরীমণিকে গ্রেফতারের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। এছাড়া আলোচিত বোট ক্লাব সরকারের অনুমোদন নিয়ে গড়ে উঠেছে কিনা এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক সরকারের অনুমতি নিয়ে এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি। শুক্রবার (৩  সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে এ তিনটি বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন হারুন।

হারুনুর রশিদ বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পরীমণিকে গ্রেফতার ও জামিনের ঘটনাও বেশ নাড়া দিয়েছে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পরীমণি গণমাধ্যমে বলেছেন, কত নাটক করে তাকে ধরে নেওয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছিল, শুধু অফিসে নেওয়া হবে, আর কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়।’

বিএনপির সংসদ সদস্য বলেন, ‘পরীমণির ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরীমণির বাসায় অভিযান চালিয়েছিল র‍্যাব। র‍্যাব নিজেরা এ ঘটনা তদন্ত করার দাবি জানিয়েছিল। কারণ, এর পেছনে অনেক বড় শক্তি জড়িত। এদের যারা ব্যবহার করছে তাদের চিহ্নিত করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘পরীমণির ঘটনায় হাইকোর্ট পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, পরীমণি একজন নারী, অসুস্থ, চিত্রজগতের কর্মী, এ জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে। এটা কোনও কথা হতে পারে? তাকে পর পর কেন তিন দিন রিমান্ডে নেওয়া হলো? এটি নিয়ে হাইকোর্ট জজকোর্টের নথি তলব করেছেন। এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে ‘পারসেপশনটা’ ভিন্ন হচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, র‍্যাব যে পরীমণিকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছিল, গ্রেফতার করেছিল, তার বাড়িতে যে মিনি বার—এগুলো কি অসত্য?

বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘দেশে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় হাউজ পার্টি, ডিজে পার্টির নামে মাদকের বিস্তার ঘটেছে। আমরা আশা করি, এর বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

বোট ক্লাবের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। সংসদের গত অধিবেশনে হারুন এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, নদীর তীরবর্তী জায়গায় বোট ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে কিনা। বোট ক্লাবে নিয়মিত মদপান করা হয়, তাস খেলা হয়, জুয়া খেলা হয়। এ রকম একটি ক্লাবের সভাপতি আইজিপি থাকতে পারেন কিনা, এ বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিবৃতি দাবি করেছিলেন।

হারুন বলেন, ‘আমার জানা নেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫০ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের কোনও ক্লাবে পুলিশ প্রধান সভাপতির দায়িত্ব বা এ রকম ক্লাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছেন।’

আবারও এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া যেসব কর্মকাণ্ড, মাদক কারবারের সঙ্গে তারাও জড়িয়ে পড়েছে।’

মোসারাত জাহানের (মুনিয়া) আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা তদন্তের জন্য নতুন করে র‍্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা, এ বিষয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিবৃতি দাবি করেন হারুন। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে মুনিয়া নামে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল। আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। বসুন্ধরার এমডির সঙ্গে মুনিয়ার ফোনালাপ, তার সঙ্গে ছবিও গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি জানতে চান, এই ঘটনার তদন্তভার র‍্যাবকে দেওয়া হবে কিনা। যদি না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি মনে করবেন, এসব অপরাধে যারা জড়িত, সরকার তাদের চিহ্নিত করতে চায় না। আড়াল করতে চায়। এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া দরকার এবং অপরাধগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা দরকার বলে মনে করেন তিনি।