পূজামণ্ডপে হামলা সরকারি মদতে: মির্জা ফখরুল

সারা দেশে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা সরকারি মদতেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এখানে আজকে অনেকে উপস্থিত আছেন, যারা ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে কামাখ্যা বাবু (উপস্থিত) তিনি ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। সেখানে নিঃসন্দেহে যারা আক্রমণ চালিয়েছে তারা কোনও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নয়। এটা আজকে সব জায়গায় তা প্রমাণ হয়ে গেছে।’

সোমবার (১৮ অক্টোবর) রাতে  গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এক মতবিনিময় সভায় সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

শারদীয়া দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপির উদ্যোগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নিচতলায় এক মতবিনিময়ের এই শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি সবসময়- দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা এটা ক্ষমতাসীনদের মদত ছাড়া সম্ভব নয়। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে ‑ আজকে আওয়ামী লীগ যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করার জন্য অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে যাতে তারা পার পেয়ে যেতে পারে সেজন্য বিভিন্ন রকমের অপকৌশল গ্রহণ করতে শুরু করেছে এটা তারই একটা প্রমাণ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি সবসময় সকল ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং সেটা তারা প্রমাণ করেছে। আপনারা জানেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রমনার রেইকোর্সে কালীমন্দির ভেঙে দিয়েছিলো। ’৭১ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিলো তখন সেটাকে বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে  দিয়েছিলো।’

তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে রমনা কালী মন্দির পুনর্নির্মাণ শুরু হয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ‑ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনেক জায়গা বেহাত হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো সাদেক হোসেন খোকা সাহেব (প্রয়াত ঢাকার মেয়র) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে পুনরায় ফেরত আনার ব্যবস্থা করেন।”

ফখরুল বলেন, ‘যখনই ঘটনা ঘটে তখনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আঙ্গুল তুলে বলেন ‑ বিএনপি নাকি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কোনো তদন্ত না করেই এসব কথা বলছেন তিনি।’

তিনি জানান, প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে মামলা করা হয়েছে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ‑ যারা নির্বাচন করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।’

‘এটার উদ্দেশ্যটা কি ‑ প্রশ্ন করে ফখরুল বলেন, ‘প্রধান প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য অতীতে যে অস্ত্রটা ব্যবহার করা হয়েছে নির্বাচনের সময়ে গায়েবী মামলা দিয়েছে, তার আগে নাশকতার মামলা দিয়েছে, তারও আগে বিস্ফোরক মামলা দিয়েছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এখানে আমরা যারা বসে আছি – এমন কেউ নেই যার বিরুদ্ধে ১০, ২০, ৬০ বা ১০০টা মামলা নেই।’

খালেদা জিয়ার শাসনামলে হিন্দুদের মন্দির নির্মাণ, সংস্কার এবং মন্দিরভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যারা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি, গণতন্ত্রের পক্ষে আছি ‑ আমরা কিন্তু এটা সহজে মেনে নিতে পারবো না। আমরা গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছি, এই আন্দোলন আরও বেগবান করব। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে আপনাদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে ­‑ এই দানবীয় শক্তি, অসুরীয় শক্তিকে অবশ্যই বধ করে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনগণের সরকার ও জনগণের পার্লামেন্ট করতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা একতাবদ্ধ হই। এই দেশটা সবার। এটা বাংলাদেশিদের দেশ, বাংলাদেশিদের মাটি। এটার কোনও ক্ষতি হতে দেবো না।”

শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আগতরাসিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, লক্ষ্মীপুর, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, বরিশাল, জামালপুর প্রভৃতি জেলা থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ও ছাত্র যুব ফ্রন্টের দেড় শতাধিক সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানের সূচনাতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের পূজামণ্ডপ ও রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। অনুষ্ঠানের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৩ তারিখ কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বললেন, আমরা সজাগ আছি। ২০ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে। এরপর অষ্টমী, নবমী হলো আপনারা পূজামণ্ডপে বিজিবি দেখেছেন কী?”

তিনি বলেন, ‘এরা (সরকার) মিথ্যাচার করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। এরা আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে, এদেরকে তাড়াতে হবে। এজন্য আজকে এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক ‑ আন্দোলনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।