জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না: মির্জা ফখরুল

ক্ষমতাসীনরা যত সমালোচনাই করুক জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে কখনও মুছে ফেলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার (২৯ মে) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার বাইরে যাচ্ছি, আমরা বিভিন্ন জেলায় সম্মেলন করতে যাচ্ছি। আমরা দেখছি মানুষের কী আকুতি, কী আবেগ। কালকে যখন আমি যশোর থেকে ঝিনাইদহ যাচ্ছি—পথে পথে মানুষ চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে যেতে চায়, যেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।’

ফখরুল বলেন, ‘আজকে জিয়াউর রহমান সাহেবকে যে যত ইচ্ছা বলুক, তাকে খলনায়ক বলুক, পাকিস্তানি চর বলুক, আর তাকে সামরিক জান্তা থেকে উঠে আসার কথা বলুক, তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ, এই দেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে তিনি প্রোথিত  হয়ে গেছেন। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে, তাকে কখনও মুছে ফেলা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেকজন নেতা খালেদা জিয়া, তিনি সেই পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন, যেই পতাকা শহীদ জিয়ার পতাকা ছিল। গণতন্ত্র আর উন্নয়নের পতাকা ছিল। ওই পতাকা নিয়ে খালেদা জিয়া ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন, দীর্ঘ সংগ্রাম। রাস্তায়, পথে-প্রান্তরে, আমাদের এই নেতাদের সঙ্গে নিয়ে, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন এবং সফল হয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আবার যখন আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট—আমাদের দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে, আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে গেছে। আমাদের সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে, ম্লান হয়ে যাচ্ছে, তখন আবার আমাদের সামনে এসে আবির্ভূত হয়েছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমান। যিনি আমাদের সুদূর থেকে পথে দিশা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতার এই দিনটি বিএনপি শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করে। ৪১তম এই শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ১০ দিনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে—এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে তা শুরু হলো।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল বিপৎগামী সদস্যের অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন।

জিয়াউর রহমান জীবনের বড় দুটি দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা হচ্ছে জিয়াউর রহমান জাতির সবচেয়ে দুঃসময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তিনি ১৯৭৫ সালে যখন জাতি প্রায় দিশেহারা, কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না, তখন আবার তিনি ওই সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনগণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ফেস করে, চ্যালেঞ্জ করে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন এবং তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই দুটার মধ্য দিয়ে তিনি আমরা বাংলাদেশি, আমাদের এই ভূখণ্ডে আমাদের যে একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি আছে, সেটাই তিনি দিয়েছিলেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম এই যে পাচার করা অর্থ, তারা নাকি ফিরিয়ে আনবে আবার। আরেক শয়তানি শুরু করবে আবার। অর্থাৎ নিজেরা এই টাকা পাচার করেছে, এটাকে ফিরিয়ে এনে জায়েজ করবে। তারা দেশের লুট করা সম্পদ ফিরিয়ে নিয়ে এসে আবারও লুটপাটের সুযোগ করে দেবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সব আদর্শ, সব কর্মসূচি আওয়ামী লীগ—যারা সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদের এজেন্ট, তারা আজকে বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে। আজকে গণতন্ত্র নাই, মানুষের অধিকার নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানবাধিকার নাই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষে নিষ্পেষিত।’

‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আজকে সময় এসেছে, এই সরকারকে একটা ধাক্কা দিতে হবে। তারা অত্যন্ত দুর্বল। এখন দরকার একটা ধাক্কা দেওয়া।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতি দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।