ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির একাত্মতা, নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার আহ্বান

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তথা আপামর জনসাধারণের উত্থাপিত এক দফা ঘোষণার সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি জাতির এই চরম ক্রান্তিলগ্নে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র প্রিয় আপামর জনসাধারণ এবং বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রাজপথে নেমে এসে ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে, অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে। শত শত শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ইনশাআল্লাহ, ছাত্র-জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী।’

রবিবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। এসময় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও সেলিনা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে ফখরুল বলেন, ‘জাতির এক চরম ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছে, তা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।’

‘ছাত্র আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং ছাত্রলীগ- যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পাখি শিকারের মতো নির্বিচারে গুলি করে লাশের স্তূপ সৃষ্টি করেছে, ব্যাপক রক্তপাত ঘটিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে। সরকার তাদের এই বর্বরতা আড়াল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কিছু স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এর দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।’

‘এজন্য মিথ্যা অভিযোগে নিরীহ ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সিনিয়র নেতা, কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়। আটক অভিযান এখনও চলছে। আন্দোলন দমাতে সান্ধ্য আইন দিয়ে, সেনাবাহিনী নামিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘দেশে আজ এক গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছে। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাঈদ, মুগ্ধসহ শত নিরীহ ছাত্র শিশু ও জনতার রক্তে অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর হাত রঞ্জিত হয়েছে। জনগণ এই ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, মা-বোন, পিতা-মাতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক আজ এক কাতারে। দলমত, বয়স, ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ ফুসে উঠেছে ক্রোধে। দ্রোহের মিছিলে শরিক হচ্ছে সব স্তরের সব শ্রেণির সব বয়সের মানুষ। আমি তাদের অভিবাদন জানাই।’

‘গতকাল শহীদ মিনারে জনতার উত্তাল সমুদ্রের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা এই অবৈধ খুনি সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছে এবং অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে। দেশের সব মানুষ এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে’, বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১২ সাল থেকে এই সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করে আসছি। অবৈধ সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে চিরস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে।’

ফখরুলের দাবি, ছাত্র-জনতার ঐক্যের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, তাকে স্তব্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে ছাত্রদের এই যৌক্তিক, ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। আজ আমরা তাদের নতুন ঘোষণাকে সমর্থন জানাচ্ছি এবং এই ভয়াবহ দানবীয় খুনি শাসকগোষ্ঠীর পতনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই অবৈধ খুনি হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’