নতুন বছরে যেভাবে চলবে জামায়াত

জামায়াতে ইসলামীবিগত দুবছরের মতো চলতি বছরেও কর্মসূচিকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে দলীয় অংশগ্রহণের মাত্রাও কমিয়ে দেবে দলটি। এক্ষেত্রে সরকারের জন্য ‘ক্ষতিকর নয়’-এমন আচরণ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কথা বলে সাংগঠনিক এই তিন পরিকল্পনার কথা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা।
এ নিয়ে জামায়াতের ঢাকা, ফেনী, কুমিল্লা ও সিলেটের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গেও কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলছেন, সরকারের কঠোর আচরণ অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে দলীয় নীরব অবস্থান আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় শূরার প্রভাবশালী সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ রাজনৈতিকভাবে একেবারেই নীরব থাকার পক্ষে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সক্রিয়তা থেকে দূরে থেকে সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখা ও চর্চার মধ্য দিয়ে দলকে সামনের দিকে নিতে আগ্রহী দলটির এই নীতিনির্ধারণী পরিষদ।
জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনী জেলা জামায়াতের আমির শামসুদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের নিবন্ধন স্থগিত। কর্মসূচি নিলেই সরকারের কঠোর আচরণ শুরু হয়। এমনকি স্বাভাবিক দিনেও গ্রেফতার হচ্ছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। এ পরিস্থিতিতে দ্বীনের রাস্তায় কাজ করাই শ্রেয়।’

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য সিলেট জেলা দক্ষিণের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যতদিন বেঁচে আছি দ্বীনের পথে কাজ করবো। রাজনৈতিক কার্যক্রম যখন সময় আসবে, তখন শুরু হবে। আমি আমিরের দায়িত্ব পালন করলেও ইবনে সিনা সিলেট শাখার দায়িত্বেই বেশি সময় কাটে।’
এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা যাইনুল আবেদিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তো মাদ্রাসা নিয়েই ব্যস্ত। এগুলো দলের স্পোকসম্যানরা (মুখপাত্র) বলতে পারবেন।’ যদিও জামায়াতে এখন কেন্দ্রীয় মেইলের বাইরে অন্য কোনওভাবেই প্রচারবিভাগের দায়িত্বশীলদের পাওয়া যায় না।

জামায়াতের রুকন পর্যায়ের কুমিল্লা জেলার এক নেতা জানান, ‘দলের কর্মসূচি নিয়ে কোনও চিন্তা নেই।’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সূত্রটি জানায়, সরকার ক্ষিপ্ত হয় বা চড়াও হয়, এমন কোনও কার্যক্রমই হাতে নেওয়া হবে না। বরং আচরণগত কৌশল দিয়ে সরকার যেন কনভিন্স হয়, সে চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে বিএনপি-জোটে নিষ্ক্রিয় থাকা, নির্বাচন পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে চান শীর্ষনেতারা।
সূত্রের তথ্যের কিছু ইঙ্গিত মিলেছে সম্প্রতি জামায়াতের কর্মকাণ্ডেও। নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হলেও বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রতিবাদ। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপে সাড়া না পেয়ে আহ্বান জানালেও প্রত্যাখ্যাত হয় দলটি। এরপর দলের আমির মকবুল আহমদ নিজে থেকেই ইসি গঠনে প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় প্রচারমেইল থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল উদ্যোগ নিলেও বিবৃতি দিয়েই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছে। দেওয়া হয়নি কোনও কর্মসূচিও।
জামায়াতের ঢাকা মহানগরের প্রভাবশালী সূত্রটির দাবি, নির্বাচনে কীভাবে অংশ নেবে, সে চিন্তা এখনও চূড়ান্ত করেনি দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে জোটের সঙ্গে হবে নাকি দলীয় প্রার্থীরা স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোট করবেন, এ নিয়েও আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে অংশগ্রহণের বিষয়ে দল ইতিবাচক। এর ইঙ্গিত মিলেছে ফেনী জেলা আমির শামসুদ্দিনের বক্তব্যে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনমুখী দল জামায়াত। নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে জোটগত না হলে নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত স্বতন্ত্রও হতে পারে। তবে সিদ্ধান্ত করবেন দলের দায়িত্বশীলরা।’
সিলেটের জামায়াতনেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান মনে করেন, ‘এখনও সময় আসেনি নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলার।’ তার ভাষ্য, ‘দলের নির্বাহী পরিষদ এ ব্যাপারগুলো দেখে, তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
জামায়াতসূত্রের দাবি, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ কোনও আন্দোলনের আপাতত কোনও সম্ভাবনা নেই। এর বাইরেও যদি জোটবদ্ধ কর্মসূচি দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল করা হবে। গত বছরের শেষ দিকে জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেয়নি জামায়াত।

জানতে চাইলে জামায়াত নেতা শামসুদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি নিজেই তো অসংগঠিত। ম্যাডাম খালেদা জিয়ার নির্দেশের পরও দল সুসংগঠিত না। আর জোটের কর্মসূচিও নেই। না থাকলে কীভাবে জামায়াত অংশ নেবে?’
জামায়াতের নেতা ও কুমিল্লা জেলার একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনে করেন, দূরত্ব বাড়েনি। কর্মসূচি না থাকার কারণে দূরে মনে হচ্ছে। এছাড়া বিএনপির ওপর সরকারের যে চাপ, তাতে করে তারাও মনে করছে দূরে থাকুক। আর তারা যতদিন না করবে না, ততক্ষণ জামায়াত নিজেই থাকবে। বিএনপি বললে জামায়াত সরে পড়বে।

/টিএন/আপ-এমও/