গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন

মেয়র নয়, কাউন্সিলর পদেই গুরুত্ব দেবে জামায়াত

আগামী ১৫ মে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী। এ ক্ষেত্রে দুই সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও মেয়র পদে কেবলমাত্র গাজীপুর সিটিকেই বেছে নিয়েছে দলটি। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বিএনপি জোটে আলোচনার পর। আর খুলনায় মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে জোটের প্রার্থীকেই সমর্থন দেবে জামায়াত। সংশ্লিষ্ট দুই নগরীর দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনজামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দুই সদস্য জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সিটি মেয়র দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাওলানা সানাউল্লাহ মিয়াকে সাংগঠনিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দলীয়ভাবে অন্তত মাসখানেক আগেই আলোচনা ছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থী থাকবে কিনা, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বিএনপি জোটে আলোচনার পর।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাজীপুর সিটিতে সংগঠনের সিটি আমিরকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’

খুলনা জামায়াতের নেতারা জানান, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী দেবে না জামায়াত। তবে তারা নগরীর অন্তত ১০টি ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। এদের প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এর মধ্যে জোটগতভাবে অন্তত ৫টি ওয়ার্ডে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে স্থানীয় জামায়াত।

খুলনা মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুলনা সিটিতে মেয়রপদে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ঐক্যমতের ভিত্তিতেই প্রার্থী ঠিক করা হবে বলে আশা করি।’

শাহ আলম আরও জানান, নগরীতে তারা অন্তত ১০টি ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী দেবেন। আর তারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দিলেও শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা হবে না বলে ২০ দলীয় জোটের একটি সূত্র জানায়। জামায়াতের নেতারা বলছেন, গাজীপুর সিটিতে ওয়ার্ডগুলোয় দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’ তবে ঠিক কত সংখ্যক প্রার্থী, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার প্রভাবশালী একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাজীপুরে দলীয় প্রার্থী সাংগঠনিকভাবে ঠিক হয়েছে, তাও অনেক আগে। এখন শেষ পর্যন্ত দাঁড়াবে কিনা তা জোটে আলোচনার পর স্পষ্ট হবে।’

এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নেব, এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়নি। এরপর ঠিক হবে, নির্বাচনে জোটগত সিদ্ধান্ত কী হবে।’

রবিবার রাতে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেই। আর এই সুযোগেই  জামায়াত দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হাইকোর্টের রায়ে স্থগিত থাকলেও স্বতন্ত্রভাবেই মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত রয়েছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলটির। আর এই সিদ্ধান্ত থেকেই আসন্ন খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে অংশ নেবে জামায়াত। মেয়রপদে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত জোটগতভাবে নির্ধারণ হলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী দেবে দলটি। তবে ওয়ার্ডগুলোয় বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় শেষ পর্যন্ত ওয়ার্ডপর্যায়ে জোটগত সমঝোতা হবে কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ আছে।

দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে জোটগত সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নেই। আর স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সুযোগ দেওয়া আছে, তারা চাইলে দলীয় প্রার্থীর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’

খুলনা নগরীর সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুলনায় মেয়র পদে জোটভিত্তিক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত আছে। তবে আমরা ওয়ার্ডগুলোতে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেব। এক্ষেত্রে জোটগত সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করব।’