রওশনের পাশে রাঙ্গা

বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরাতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের দেওয়া চিঠি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা।

জাতীয় পার্টির সব পদ থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া রাঙ্গা মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সংসদ ভবনে দেখা করেছেন। এ সময় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ তার সঙ্গে ছিলেন।

স্পিকারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে রাঙ্গা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতাকে (রওশন এরশাদ) তার পদ থেকে সরাতে স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়াটা যে ঠিক হয়নি, সেটা আমি এর আগে (১৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম। যেহেতু প্রক্রিয়াটি ঠিক হয়নি, সেহেতু আমি আমার সই করা চিঠিটা প্রত্যাহার করার জন্য আজ স্পিকার মহোদয়কে জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দলের গঠনতন্ত্র স্পিকারকে দিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এরআগে গত ৩০ আগস্ট রওশন এরশাদের নামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ের প্যাডে রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহর নামে একটি চিঠিও ছিল।

তিন পৃষ্ঠার ওই বিজ্ঞপ্তিতে দলের ভেতরকার রাজনীতির নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। এছাড়া আগামী ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন আহ্বান করেন রওশন। নিজেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি কমিটিরও ঘোষণা দেন তিনি।

রওশনের আচমকা এই ঘোষণায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথমে কোনও মন্তব্য না করলেও পরে চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন, কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার রওশনের নেই। তার পদক্ষেপ ‘অবৈধ’।

রওশনের ওই পদক্ষেপের পরদিনই তাকে সংসদে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত ১ সেপ্টেম্বর তাদের সিদ্ধান্ত জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে। পরে দলের প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাও একটি চিঠি দেন স্পিকারকে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের সব পদ থেকে মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রাঙ্গার দাবি, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে স্পিকারকে করেন রাঙ্গা।

রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে বাদ দিতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকের পর স্পিকারকে পাঠানো চিঠিতে ‘হুমকির মুখে’ সই করেছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘তখন সই না করলে আমাকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’

মঙ্গলবার বিকালে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর পর বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘একই সময় জাতীয় পার্টির দুটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। একটিতে বলা আছে, প্রধান পৃষ্ঠপোষক সব কাজ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তার সঙ্গে পরামর্শ করবেন। আরেকটায় প্রধান পৃষ্ঠপোষকের কোনও খবরই নেই। গঠনতন্ত্র নকল করে আরেকটা করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘একটা দলের যখন মিটিংয় হয়, তখন সভাপতিত্ব যিনি করেন তিনি চিঠি দেবেন। উনি (জি এম কাদের) সেটা না করে আমাকে দিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন । চিফ হুইপের এটা দেওয়ার কথা না। আমি যে মিটিং করেছি সেটা ৩১ আগস্টে। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর জাপার এমপিরা মিটিং করেছেন। সেখানে আমিও ছিলাম। মিটিংয়ে আমার কাছ থেকে চিঠিতে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

রাঙ্গা এখন রওশন এরশাদের সঙ্গে আছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি দলের সঙ্গে আছি। দল একটাই থাকবে। এখনও চাই উনারা বসে ঠিক করুন। দলে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্পিকারকে বলেছি, এজেন্ডা ছাড়া মিটিং করে বিরোধী দলের নেতাকে বাদ দিয়ে যদি কেউ উপনেতা নেতা হন, তবে সেটা দুঃখজনক। বৈঠকের তো এজেন্ডা থাকতে হবে। স্পিকার বলেছেন, উনি দেখবেন।’

প্রসঙ্গত, রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নানা বৈঠকে দুজন বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। নানা কৌশলে তাদের সামলাতেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে ছিলেন এরশাদ। ভোটের আগে তিনি নাটকীয়ভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে রওশনের নেতৃত্বে একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপিবিহীন সেই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন রওশন।

এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে রওশন তাতে আপত্তি তোলেন। এরশাদের আসনে উপনির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়।

এরপর জি এম কাদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ পাওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিলে তাদের বিভেদ আরও বাড়ে। একপর্যায়ে দলের একটি অংশ রওশনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে জাতীয় পার্টি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়।

ওই সময় দুই পক্ষের নেতাদের সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জি এম কাদেরই পার্টির চেয়ারম্যান থাকবেন। আর রওশন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।