‘ঋণখেলাপি-অর্থপাচারকারীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না’

ঋণখেলাপি ও অর্থপাচার বন্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেছেন, খেলাপি ঋণ লাগামহীন গতিতে বেড়েই চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘ঋণখেলাপি, ব্যাংক লুটেরা এবং অর্থপাচারকারীরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।’

রবিবার (৩ মার্চ) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সালমা ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কমানো। আরেকটি হচ্ছে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং শেষটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনীতি বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসা।’

জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য কমাতে হলে শুধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিলেই চলবে না। ডলার সংকটের সমাধান করতে হবে। কারণ, ডলার না থাকলে পণ্য আমদানি করা যাবে না। আর তাতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ না থাকলে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি প্রভাবশালী কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। আমেরিকা, চীন ও ভারত—এই তিন দেশই আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং, কূটনীতিতে ভারসাম্য দরকার। জিএসপি সুবিধা যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সফল কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। ২০২৬ সালের পর আমরা যখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবো, তখন যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে—সেগুলো মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চিত্র তুলে ধরে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশে পৌঁছানোর অভিযাত্রা ঠিক করেছে। কিন্তু এ অভিযাত্রায় আমাদের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্থিক খাতে চরম অব্যবস্থা। খেলাপি ঋণ লাগামহীন গতিতে বেড়েই চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ডলার সংকট বাড়ছে। রিজার্ভ ক্রমাগত নিম্নমুখী। ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। অনেক ব্যাংক রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপি, ব্যাংক লুটেরা এবং অর্থপাচারকারীরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। তাই তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শিল্প ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার তুলে নেওয়ায় সুদের হার ইতোমধ্যে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে সুদের হার বাড়লে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এমনিতেই ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। এ অবস্থায় শিল্প ঋণের সুদের হার ওপেন করে দেওয়া মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আশা করছি শিল্প ঋণের সুদের হার কমাতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাহলে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সহজ হবে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির নেত্রী বলেন, ‘ওই নির্মম অগ্নিকাণ্ডে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে পড়লো। এর দায় কে নেবে? অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানির পর বলা হয় সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বলা হচ্ছে, এ সিলিন্ডার ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের অভাব ছিল। কিংবা ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। এসব বলে প্রতিটি দুর্ঘটনায় দায় এড়ানোর চেষ্টা চলে। এভাবে প্রাণহানি রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? দেশের মানুষ তা জানতে চায়।’

সরকারি দলের সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমর বলেন, ‘‘আমাদের গণতন্ত্র আমাদের মতো। আমাদের গণতন্ত্র ওয়েস্ট মিনস্টার টাইপ হবে না। আমাদের গণতন্ত্র আমেরিকার মতো হবে না, যেখানে ইলেকটোরাল কলেজের ২৭৩টি ভোট পেলেই হবে। আমাদের গণতন্ত্র ফ্রান্সের মতো হবে না, যেখানে ৫১ শতাংশ ভোট পড়তে হবে। আমাদের গণতন্ত্র নর্থ কোরিয়ার মতোও হবে না, যার নাম ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক নর্থ কোরিয়া। যেখানে ডেমোক্র্যাসির ‘ড’ও নেই। আমরা যদি আজকে আমেরিকা, জাপান ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানির উদাহরণ দেই— আমরা তো ব্রিটিশ না, আমরা তো জাপানিজ না। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের মতো হতে হবে। দেখতে হবে গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া চলমান  কিনা। একদিন হয়তো দেখা যাবে, এমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পৌঁছে যাবো, সমগ্র পৃথিবী আমাদের ধন্যবাদ জানাবে।’’