জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া নিয়ে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদজঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া জাতিসংঘের সদর দফতরে জমা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাচ্ছেন ওই কর্মসূচির উদ্যোক্তা মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। পরে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর সদর দফতরেও একই ফতোয়া জমা দিতে সৌদিআরব যাবেন তিনি।
এজন্য, ফতোয়ার কপি ইংরেজিতে অনুবাদের পাশাপাশি আরবি ভাষাতেও অনুবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সদর দফতর এবং ওআইসি সদর দফতরে এ ব্যাপারে তার পক্ষে যোগাযোগও করা হয়েছে। গত ১১ জুলাই ফতোয়ার কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তরের পরে এই সফরে যাচ্ছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের এই খতিব। বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি নিজেই।
দেশে সাম্প্রতিককালের সন্ত্রাসী তৎপরতা ও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে এক লাখ আলেম, মুফতি ও ইমামদের কাছে জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহের উদ্যোগ নেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। পরে এ সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক করা হয় তাকে। গত ২ জানুয়ারি এ বিষয়ে কাজ শুরুর পর ১৮ জুন মাসে তার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া প্রকাশ করা হয়।

জানা গেছে, জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়াটি ৩০ খণ্ডে গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছে।এ ফতোয়ার একটি কপি জাতিসংঘে এবং আরেকটি কপি ওআইসিতে উপস্থাপন করবেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে  জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ার কপি দেওয়া হবে ১১ আগস্ট। এছাড়া আমি নিজে গিয়ে ফতোয়ার কপি জাতিসংঘ ও  ওআইসিতে জমা দিতে আসবো। সারাবিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের এই ব্যাখ্যা অবশ্যই বিরাট অবদান রাখবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়াবে বলেও আশা প্রকাশ করছি।

শোলাকিয়ার এই খতিব আরও বলেন, ‘মুসলিম সমাজে ফতোয়ার অর্থাৎ কুরআন হাদীসের আলোকে মুফতি ও ধর্মবেত্তাদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও মতামতের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যার সমাধান পেতে আজও বিপুলসংখ্যক মানুষ আলেম ও মুফতিগণের দ্বারস্ত হন এবং তাদের ফতোয়া অনুসরণ করেন।

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন কতিপয় দুষ্কৃতকারী নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহাগ্রন্থ কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মানুষের চোখে ইসলামকে একটা বর্বর নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী ধর্মরূপে চিত্রিত করছে। এতে সরলমনা কেউ কেউ বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে।এই উগ্র জঙ্গিবাদীরা মূলত ইসলাম ও মুসলিমদেরই শত্রু, নয় মানবতার শত্রু। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আফ্রিকার দেশগুলো কীভাবে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তা আজ কারও অজানা নেই। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও আজ হুমকির সম্মুখীন। এজন্য এই ফতোয়া মানুষেকে সঠিক বার্তা দেবে।

প্রসঙ্গত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের  ১ লাখ ১ হাজার ৫২৪ জন মুফতি, উলামা ও ইমাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। ফতোয়া সংগ্রহ কমিটি এই বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ভারত; মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী; ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা; চরমোনাই জামিআ রশিদিয়া ইসলামিয়া; শায়খ যাকারিয়া রিসার্চ সেন্টারসহ উপমহাদেশের আরও কিছু ইসলামি বরেণ্য প্রতিষ্ঠানের ফতোয়াও সংগ্রহ করেন। লাখো আলেমের ফতোয়ায় অংশ নিয়েছেন নারী আলেমরাও। দেশের ৯ হাজার ৩শ’ ২০ জন নারী আলেমা স্বাক্ষর করেছেন জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায়।

/সিএ/টিএন/আপ-এনএস/