যে কারণে দিল্লিতে তরিকত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন শ্রিংলা

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে দিল্লিতে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাও ছিলেন।

তরিকত ফেডারেশনের শীর্ষ নেতারা এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমন্ত্রণেই ভারত সফর করছেন। তাদের সেই সফরের অংশ হিসেবেই তরিকত নেতাদের সঙ্গে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিবিদের এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।

বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী টুইট করেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সভ্যতাগত ঐতিহ্যের অংশীদারি আছে এবং দুদেশের মানুষের মধ্যে (পিপল টু পিপল) যে সম্পর্ক, তা নিয়েই ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’ 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব স্মিতা পন্থও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

ভারতের বিজেপি সরকার বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ছোট ছোট ইসলামপন্থী কিছু দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছে। 

বছর তিনেক আগেও ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দিল্লি ঘুরে গিয়েছিলেন জাকের পার্টি বা তরিকত ফেডারেশনের শীর্ষ নেতারা। আবারও তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দিল্লি এই বার্তাই দিতে চাইছে যে তারা সেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসুক।

‘বাংলাদেশ মানেই যে শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয়, সেখানে একটা মধ্যপন্থী ও উদার ইসলামী রাজনীতিরও পরিসর আছে– এই দলগুলোর নেতাদের ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়ে দিল্লি সেই বাস্তবতারই স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে মনে করি’, বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন দিল্লিতে একটি স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্কের সিনিয়র ফেলো ও বাংলাদেশ-গবেষক স্মৃতি পট্টনায়ক।

এই দলগুলোকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানোর আরও একটা কারণ জাকের পার্টি বা তরিকত ফেডারেশনের মতো দলগুলো প্রধানত সুফি ভাবধারার ও মাজার-কেন্দ্রিক এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের বিরাট আদর্শগত দ্বন্দ্ব আছে। 

ভারত যেহেতু জামায়াতকে একেবারেই বিশ্বাস করে না, ফলে বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতিতে তাদের বিরুদ্ধ-মতকেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে দিল্লি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিচ্ছে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। 

তরিকতের বর্তমান দিল্লি সফরে দলীয় প্রধান, আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির সঙ্গেই ভারতে এসেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ও অন্যতম শীর্ষ নেতা সৈয়দ তৈয়্যবুল বশর মাইজভান্ডারি। প্রায় সোয়া তিন বছর পরে তারা ভারত সরকারের আমন্ত্রণে আবার এ দেশে এসেছেন। 

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের আর একটি ইসলামী দল জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদিও মোদি সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফর করেছিলেন। সেই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন তার পুত্র ও দলের তরুণ নেতা সাঈম আমির ফয়সলও। 

এসব সফরে বিদেশি দলগুলোর নেতারা যাতে ভারতের বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন, ভারতীয় নীতিনির্ধারক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে খোলাখুলি মতবিনিময় করতে পারেন– সরকারি উদ্যোগেই তার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তরিকত নেতা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির বর্তমান দিল্লি সফরেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।