সাবেক মন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তার সহধর্মিণী অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, ‘আমরা সবসময় একসঙ্গে থাকতাম বলে ল'ইয়াররা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করতো। আমাদের মানিকজোড় বলতো। আমরা যেখানে যেতাম একসাথে যেতাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছেও আমরা একসঙ্গে যেতাম। উনি আমাদের খুব স্নেহ করতেন।’
রবিবার (১২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে নিয়ে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন আইনজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নিজ এলাকার নানা পেশার মানুষ ও পরিবারের সদস্যরা।
স্মৃতিচারণ করে অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, ‘একদিন আদালতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমাদের দেখা হলো। তিনি আমাকে তুই করে বলতেন। তিনি আমাকে বললেন, তুই কি তোর হাজবেন্ডকে খাওয়াতে পারিস? আমি বলি উনাকে (নাজমুল হুদা) দেখিয়ে বলি, কি মনে হয় আপনার, উনার খাবারের অভাব আছে। তিনি (বঙ্গবন্ধু) আসলে আমাদের দুজনকেই খুব ভালোবাসতেন।’
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সবসময় গবেষণা পছন্দ করতেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি যে তৃণমূল বিএনপি করেছেন, এটাও কিন্তু একটা রিসার্চের মাধ্যমে এসেছে। উনি কখনও রাস্তায় মিছিল করতে পছন্দ করতেন না। বিএনপি যখন রাস্তায় মিছিল করতেন, উনি যেতেন না। উনি বলতেন, আমি মারপিট পছন্দ করি না। তিনি আসলে অন্যরকম মানুষ ছিলেন। তিনি চাইতেন রিসার্চ করতে, পলিসি বের করতে। দেশের জন্য কোনটা করলে ভালো হবে, সেটা ভাবতে তিনি ভালবাসতেন। আমার একটা ইচ্ছা আছে নাজমুল হুদা রিসার্চ সেন্টার তৈরি করার।’
নাজমুল হুদা বাংলাদেশ অনেক ভালোবাসতেন, দোহারকে অনেক ভালবাসতেন উল্লেখ করেন তার সহধর্মীনি। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের পর আমাদের সুযোগ ছিল দেশের বাইরে চলে যাওয়ার, কিন্তু তিনি যাননি। তিনি সবসময় এই দেশেই থাকতে চেয়েছেন।’
বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা বলেন, ‘আমার বাবা কয়েকদিন আগেই চলে গেলেন আমাদের মাঝ থেকে। একজন সন্তানের এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না যে, সে তার বাবার জন্য স্মৃতিচারণ করুক। আমার বাবার সঙ্গে আমি যে মুহূর্তগুলো কাটিয়েছি, সবইতো এখন স্মৃতি। আমি এতটুকুই বলবো, আপনারা আমার বাবাকে নিয়ে এতো সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন, তার কন্যা হিসেবে বায়াস্ট হয়ে আমাকে কিছু বলতে হচ্ছে না। আমার বাবা আমার কাছে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী বা আইনজ্ঞ ছিলেন না। এগুলোর ঊর্ধ্বে তিনি আমার বাবা ছিলেন।’
নাজমুল হুদার সাবেক একান্ত সহকারী আক্কাস আলী খান বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। মানুষের প্রতি স্যারের যে অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল। সে কারণেই আমরা উনার সঙ্গে ছিলাম। তিনি সবার খোঁজখবর নিতেন। কাউকে না দেখলেই তার কথা জানতে চাইতেন।’
সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি দোহারে তার জানাজায় ছিলাম। তার জানাজা নির্দিষ্ট সময়ের থেকে এক দেড় ঘণ্টা পরে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু একজন মানুষও চলে যায়নি। দোহারবাসী তাকে অনেক ভালোবাসতো।’
‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ গানের গীতিকার হাসান মতিউর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক ভিন্নতার কারণে তার সঙ্গে আমার কম কথা হতো। পলিটিকস আমাদের দূরে ঠেলে গেলেও অন্তর আমাদের দূরে যেতে দেয়নি। আমি প্রায় ৬০০ গানের জন্য পুরস্কার পেয়েছি। এর মধ্যে বেশিরভাগই আমি উনার হাত থেকে নিয়েছি। উনি তথ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায়। তিনি খুব মজার মানুষ ছিলেন। তার কাছে সহজেই যাওয়া যেতো। আমি আওয়ামী লীগ করা সত্ত্বেও তার কাছে পাঠানো আমার এক লোককে সাহায্য করেছিলেন। তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন।’
ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব রশিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট মনির হোসেন রানার সঞ্চালনায় সভায় স্মৃতিচারণ করেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ মিয়া, সাবেক ছাত্রনেতা সুরুজ আলম সুরুজ, জাসাস নেতা সালাউদ্দিন মোল্লা, কেএম খালেকুজ্জামান জুয়েল প্রমুখ।