নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন

আন্দোলনরত অন্যান্য বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সব কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার দিন নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করা হবে। পরের দিন সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল।

রবিবার (১২ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গত ৩ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক গণবিস্ফোরণ হয়েছে উল্লেখ করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘সেখানে আমরা সরকারকে সতর্ক করে ১০ নভেম্বরের মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান করেছিলাম। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা ত্যাগের কথা বলেছিলাম। আপনারা জানেন, ইসলামের রীতি হলো, কোনও শক্ত অবস্থান নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সতর্ক করতে হয়, সময় দিতে হয়। আমরাও তা দিয়েছিলাম।’

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘জাতীয় সংকট নিরসনে সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

তিনি যোগ করেন, ‘৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন ক্ষমতা লিপ্সার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের ভয়াবহতা দেশবাসীর সামনে আমরা তুলে ধরি। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট উত্তরণে সরকারের কাছে কিছু যৌক্তিক দাবিও জানাই। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।’

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে সরকার পরিবর্তনে জনমতের মুখাপেক্ষী হওয়া আধুনিক বিশ্বে সর্বজন স্বীকৃত একটি রীতি। এই রীতি বাস্তবায়নে নির্বাচনকে অবাধ-নিরপেক্ষ করা জরুরি। স্বৈরাচার ছাড়া আর কেউ এই প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে না।’

সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বয়ংক্রিয় ও কার্যকর করা যায়নি। এ কারণে নির্বাচনকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ১৯৯৬ সালে দেশে সার্বজনীন রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার সুফলও জাতি পেয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সার্বজনীন সমর্থিত এই ব্যবস্থাকে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে হত্যা করেছে। শুধু হত্যা করেই তারা থামেনি বরং এই ইস্যুতে তাদের আচরণ, কথাবার্তা অমার্জিত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। যে কারণে আজকে সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল থেকে কার্যত উগ্রবাদী দলে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিচ্ছে। সেসব কর্মসূচির নামের সঙ্গে শান্তি থাকলেও কার্যত তা সন্ত্রাসী কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। লাঠি নিয়ে মহড়া, যাকে তাকে তল্লাশি করা, আতঙ্ক তৈরিতে আওয়ামী লীগ যা করছে, তা ৭১’র শান্তিবাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।’

ইসলামী আন্দোলনের দাবি

সংবাদ সম্মেলন থেকে চার দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। দাবিগুলো হলো–

১. অনতিবিলম্বে চলতি সংসদ ভেঙে দিয়ে সব প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।

২. রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার ব্যক্তি, বিরোধী দলের সব নেতাকর্মী এবং ওলামায়ে কেরামকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতায় সংলাপের আয়োজন করতে হবে।

৩. বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করতে হবে।

৪. রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আগে কোনও অবস্থাতে তফসিল ঘোষণা করা যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– দলটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রমুখ।