৭ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধের দাবিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। দলটির মহাসচিব ইউনুছ আহমাদের সই করা স্মারকলিপি রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। ৭ পৃষ্ঠার স্মারকলিপির বিষয়ে লেখা হয়েছে ‘একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ, অবৈধ পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া এবং প্রাথমিক ও মধ্যমিক শিক্ষাস্তরে প্রবর্তিত ও বিতর্কিত নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলের দাবি প্রসঙ্গ।’
রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন শান্তিকামী জনগণের পক্ষ থেকে আপনাকে আপনার মহান পবিত্র দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছে। খুবই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ বলতে হচ্ছে যে, একজন নেতা এবং একটি দলের গোয়ার্তুমির কারণে দেশ আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত হয়েছে। অবস্থা কতটা খারাপ হয়েছে যে, আমেরিকা-ভারতের মতো দু’টি দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয় এবং সেই আলোচনা রাজনীতিতে গুরুত্ববহন করে। স্বাধীনতার জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারে না।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘‘রাজনীতিকে বলা হয় ‘আর্ট অব কম্প্রোমাইজ’। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে সেই কম্প্রোমাইজেশন ও বোঝাপড়া, সমঝোতার জায়গা রুদ্ধ হয়ে গেছে। এর দায়ও বর্তমান সরকারের। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও জাতীয় নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। কারণ, নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে যে আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকার দরকার, তা এই সরকারের নেই। সরকার জনমত উপেক্ষা করে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশে যা বলা হয়েছে— তাতে এই সংবিধানের যে অংশে যাই থাকুক না কেন, কোনও অবস্থাতেই জনগনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করার এখতিয়ার এই সংবিধান কাউকে দেয় না। জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটাতে যদি সংবিধানের কোনও সংশোধনীও প্রয়োজন হয়, সে সুযোগও রয়েছে। অতীতে কারণে-অকারণে ১৭ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো আবারও ক্ষমতায় আসতে চায়। আগামী ৭ জানুয়ারি এমনই একটি জঘন্য একতরফা প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের অপরিণামদর্শী প্রস্তুতি চলছে। দেশের অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো, দেশকে অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। এজন্যে আপনার কাছে আমরা শান্তিপ্রিয় দেশবাসীর পক্ষ থেকে বিনীতভাবে দাবি জানাচ্ছি— আপনি ৭ জানুয়ারি ঘোষিত একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুন এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন।’
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরনে রাষ্ট্রপতির কাছে ৪ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। তাদের দাবিগুলো হলো—
১. অনতিবিলম্বে চলতি সংসদ ভেঙে দিয়ে সব প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করা।
২. রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মী এবং আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতায় সংলাপের আয়োজন করা।
৩. নির্বাচন কমিশন বাতিল করা।
৪. ৭ জানুয়ারি একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করা। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আগে কোনও অবস্থাতেই দেশে কোনও নির্বাচন করা যাবে না।
এদিকে স্মারকলিপিতে শিক্ষা নিয়েও বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম ২০২১- এ এদেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রচলিত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। যা শিক্ষানীতি-২০১০ এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের বিপরীত। এ সিদ্ধান্ত এদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম ধর্ম শিক্ষাকে শুধু সঙ্কুচিত ও উপেক্ষাই করা হয়নি, রীতিমতো ইসলাম শিক্ষার সঙ্গে উপহাস করা হয়েছে। মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় পর্দা ও দাড়ি সম্পর্কে বিদ্রুপ করা হয়েছে নির্লজ্জভাবে। বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম ২০২১ বাতিল করতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও সব পরীক্ষায় আবশ্যিক করতে হবে।