ঘুরে দাঁড়াতে চায় তৃণমূল বিএনপি, বিষণ্ন শীর্ষ নেতারা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আলোচনায় থাকা তৃণমূল বিএনপি কোনও আসনেই জয়ী হতে পারেনি। জামানত হারিয়েছেন স্বয়ং দলটির চেয়ারপারসন ও মহাসচিবও। তবে দলের নেতাদের দাবি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘প্রতারিত' হয়েছেন তারা।

যদিও তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যথেষ্ট আলোচনায় ছিল তৃণমূল বিএনপি। জয় না পেলেও রাজনৈতিক পরিচয় পেয়েছে তারা। এ কারণে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে কার্যক্রম শুরু করতে চায় দলটি।

রবিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনের তোপখানা রোডে অবস্থিত তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে দেখা যায় অফিসে আলো জ্বলছে। কেন্দ্রীয় কোনও নেতা উপস্থিত না থাকলেও যুগ্ম সম্পাদক রোকসানা আমিন সুরমাসহ দুজন নেতা বসে কথা বলছিলেন। এ সময় তৃণমূল থেকে নির্বাচনে দাঁড়ানো কয়েকজন প্রার্থী কার্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য এসে ঘুরে যান।20240121_182942

কার্যালয়ে অবস্থান করা নেতারা জানান, নির্বাচন শেষ হওয়ার ১৪ দিনের মাথায়ও কার্যালয়ে আসেননি দলের চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার।

তারা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা মানসিকভাবে বিষণ্ন এবং নির্বাচন শেষে শারীরিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ। তাই এখনও কার্যালয়ে আসেননি তারা। তবে নিয়মিত দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান যুগ্ম সম্পাদক রোকসানা আমিন।

নির্বাচনের পর তৃণমূল বিএনপির পরাজিত প্রার্থীরা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, জানতে চাইলে রোকসানা আমিন বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন ছিল আমাদের দলের জন্য প্রথম জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এমন আশ্বাসেই আমরা অংশগ্রহণ করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও সরকার সেই কথা রাখেনি। তবে আমাদের দলের নেতারা আশাবাদী। তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে জয় না পেলেও তারা রাজনৈতিক পরিচয় পেয়েছেন। মানুষের ভরসা পেয়েছেন। তাই তারা আরও সক্রিয় হতে চান।

দলের পরবর্তী কার্যক্রম কী, জানতে চাইলে দলের এই যুগ্ম সম্পাদক বলেন, এখনও কোনও কার্যক্রম ঠিক হয়নি। দলের সিনিয়র নেতাদের মানসিক অবস্থা ভালো নয়। তার ওপর অসুস্থ। তারা আবার ফিরে এলে সব নেতাকর্মীর সঙ্গে বসে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবো।

কার্যালয়ে উপস্থিত তৃণমূল বিএনপির রাঙামাটির ২৯৯ আসনের প্রার্থী শাহ হাফেজ মো. মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে আমি বলেছিলাম আর কেউ না পারুক, আমি অন্তত রাঙামাটির আসনটি তৃণমূল বিএনপিকে উপহার দেবো। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। আমার আসনে দুপুরের মধ্যে শতভাগ ভোট পড়েছে বলে জানানো হয় আমাকে। তারপরও স্থানীয়রা আমাকে অনেক উৎসাহ জুগিয়েছেন। তারা বলেছেন, যদি উপজেলা নির্বাচন করি, তারা পুরোপুরি সমর্থন দেবে। এখন যদি দল এগিয়ে যায়, তাহলে আশা করি আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে।

দলের আগামী পরিকল্পনা নিয়ে তৃণমূল বিএনপির ভাইস চেয়ারপারসন সালাম মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের নির্বাচনের পর প্রার্থীদের নিয়ে বসার কথা ছিল, কিন্তু চেয়ারপারসন ও মহাসচিবের শারীরিক অসুস্থতার কারণে তা পেছানো হয়েছে। তবে আমরা শিগগিরই বসে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবো। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। যেসব কমিটি আছে, তা পুনর্গঠন করবো। যেসব জেলায় কমিটি নেই, সেখানে কমিটি দেবো।20240121_182850

উল্লেখ্য, বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা ও স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা হয় তৃণমূল বিএনপি। পরে ২০১৮ সালে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দলটি নিবন্ধন পায়। নিবন্ধন পাওয়ার তিন দিনের মাথায় মারা যান নাজমুল হুদা। তার মৃত্যুর পর গত ৬ মে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন তার মেয়ে অন্তরা হুদা।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে শমসের মবিন চৌধুরীকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন ও অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে মহাসচিব বানানো হয়। তারা দুজনই বিএনপির সাবেক নেতা।

দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে দলটির প্রত্যাশা অনেক ছিল। নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ১৩৫টি আসনে লড়াই করে তৃণমূল বিএনপি। তবে একটি আসনেও জয়ী হতে পারেননি দলটির কোনও প্রার্থী।