নারী সংস্কার কমিশন বাতিলে জামায়াত-এবি পার্টিসহ ইসলামি দলগুলো একমঞ্চে

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলে একমঞ্চে এসে দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসহ বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা।

ইসলামী আন্দোলনের ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের’ উদ্যোগে বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই মত প্রকাশ করেন তারা।

সেমিনারে নেতারা বলেন, সরকার পতিত স্বৈরাচারের জঞ্জাল পরিষ্কারের লক্ষ্যে যে সামগ্রিক সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা জনসমর্থনপুষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল বটে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতো কিছু কমিশন জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। কিন্তু নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থি এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।

বক্তারা বলেন, এই কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ এমন, যা পশ্চিমা মতবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারীসমাজের প্রকৃত চাহিদা ও জীবনসংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত। নারীপাচার, যৌন নিপীড়ন ও দারিদ্র্যজনিত কারণে যারা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসন ও সমাজে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করার কথা থাকলেও কমিশন বরং এই ব্যাধিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারীর জন্য অভিশপ্ত জীবনকে আইনি বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।

সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, নারীর জন্য কল্যাণকর প্রস্তাবনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, তাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও পারিবারিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। অথচ কমিশন যে ভাষায় ও যুক্তিতে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, তা পশ্চিমা দর্শনেরই বিকৃত প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের নারীরা এ ধরনের ভাষা ও মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে না। বক্তারা প্রশ্ন করেন, সরকার যে নারীদের কল্যাণে কমিশন গঠন করেছে, সেখানে কীভাবে সবাই একমুখী, ইসলামবিরোধী এবং পাশ্চাত্য চিন্তায় প্রভাবিত হলো?

সেমিনারে সর্বসম্মতিক্রমে কিছু দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হলো– নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; কমিশন সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে; নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের ভিত্তি হতে হবে কুরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতা।

মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজির সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন– মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, ডা. শফিকুর রহমান, মাওলানা মামুনুল হক, মুজিবুর রহমান মঞ্জু,  নুরুল হক নুর, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ; মাওলানা গাজী আতাউর রহমান; মাওলানা আশরাফ মাহদি, মাওলানা রুহুল আমীন সাদি; মুফতি সাকিবুল ইসলাম কাসেমি, আরিফুল ইসলাম অপু, মুফতি আবু মুহাম্মাদ রাহমানি, মুফতি লুতফুর রহমান ফারায়েজি, হাফেজ আব্দুল বাসিত আল হাসসানি, পীর জুলফিকার নকশবন্দি; মাওলানা হানজালা; শায়খ আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক হাফি; নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী প্রমুখ।