১৭ লাখ পরিবারকে ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’ পৌঁছে দিচ্ছে নগদ

কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপলক্ষে আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। সুবিধাভোগীদের মধ্যে ১৭ লাখ পরিবারের কাছে টাকা পাঠাচ্ছে ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’। অসহায় মানুষদের জন্য এটি ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’।
নগদ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক জানান, প্রথম দিনেই দুই লাখ পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার কথায়, ‘ঈদের আগেই সবাই যেন টাকা পায় সে ব্যবস্থা করতে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সাতদিনের মধ্যে সব টাকা পৌঁছে দেবো। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এমএফএস অ্যাকাউন্ট খুলে সুবিধাভোগীদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছি আমরা।’
তানভীর এ মিশুক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপহার পৌঁছে দিয়ে তাদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি নতুন ভরসা দিলেন। করোনাকালীন ত্রাণ দিতে গিয়ে আমরা বেশকিছু অনিয়ম ও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। এ সমস্যার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেজন্য মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে মানুষের কাছে সরাসরি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। নগদের লেনদেন খরচ হাজারে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা। এই পদক্ষেপের কারণে আমরা ৬ টাকা পাবো, বাকি ৮ টাকা ৫০ পয়সা ভর্তুকি দিতে হবে আমাদের। কিন্তু তারপরও নগদ এমন মহতী সব উদ্যোগের পাশে থাকবে। সরকার নির্দেশ দিলে পুরো ভর্তুকি দিতে আমরা প্রস্তুত।’
‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’ যেন সবাই ঈদের আগেই পায় সেজন্য চারটি মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৪ মে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী, মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘এই নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা সুবিধাভোগীর তালিকা মোতাবেক জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (এনআইডি) যাচাই করে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে নগদ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এজেন্ট পয়েন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ নগদ অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

তালিকাভুক্তদের কাছে নগদ ছাড়াও বিকাশ, রকেট ও শিওরক্যাশের মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে টাকা। ফলে বাড়তি কোনও ঝামেলা পোহাতে হবে না। টাকা পাঠানোর খরচ বহন করবে সরকার। টাকা ক্যাশআউট করতে সুবিধাভোগীদের কোনও খরচ দিতে হবে না।

Nagad sends money to 17 lac familiesনগদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পরিবারের (১৭ লাখ) কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিকাশের মাধ্যমে ১৫ লাখ, রকেটের মাধ্যমে ১০ লাখ এবং শিওরক্যাশের মাধ্যমে ৮ লাখ পরিবারের কাছে টাকা চলে যাবে।

কর্মসূচিটির জন্য সরকার ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরে নগদ সহায়তা সুবিধা পাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ। এজন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোল্ট্রি খামারের শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন-আয়ের বিভিন্ন পেশার মানুষের নাম এসেছে এতে।

গণভবন থেকে গত ১৪ মে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ পাঠানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে অংশ নিয়ে বরগুনা জেলার একজন জেলে ও শরীয়তপুর জেলার একজন ভ্যানচালক আর্থিক সহায়তা পেয়ে তাকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল। হাতে হাতে টাকা নিতে হবে না, কারও কাছে ধরনা দিতে হবে না কিংবা কাউকে বলতে হবে না। সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে টাকা।’

নগদ ও রবি আজিয়াটার চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানএদিকে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ৫ কোটি গ্রাহককে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ‘নগদ’। সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তিস্বাক্ষর হয়েছে। এখন থেকে রবি ও এয়ারটেল গ্রাহকেরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিন সেট করে ১০ সেকেন্ডেই নগদ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশনের তিন দিনের মধ্যে যেকোনও পরিমাণ টাকা ক্যাশ-ইন করে নগদ-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নির্দিষ্ট মন্তব্যের ঘরে মন্তব্য করে গ্রাহক লাখপতি হয়ে যেতে পারেন।

করোনাভাইরাসের কারণে ‘লাখপতি’ উদ্যোগটির ৫ শতাংশ টাকা ‘নগদ’-এর সামাজিক উদ্যোগের (মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে) আওতায় ব্যয় করা হবে। রবি ও এয়ারটেল গ্রাহকেরা ‘নগদ’-এর মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ করতে পারবেন।

সম্প্রতি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিতে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, সেই টাকা পেতে ১০ লাখেরও বেশি গ্রাহক ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।