পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় আসক’র নিন্দা

বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভরত পাঁচ শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও দাবি জানায় তারা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন। শনিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বেতন ভাতা নিয়ে ১৬ এপ্রিল থেকে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এর জেরে সকালে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রমিক নেতারা।
তিনি আরও বলেন, বৈঠক চলার সময় দাবি-দাওয়া আদায় নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ২৩ জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

সংঘর্ষের পর ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে রেখেছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার গ্রামবাসী। জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এর আগেও ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল দুপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের দু’পক্ষ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, বেতন-ভাতার ন্যায় ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করা শ্রমিকদের অধিকার। আর পুলিশের দায়িত্ব শ্রমিকরা যেন নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে পারে তার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। অতিমারী করোনার সময় যেখানে দেশের নানা প্রান্তে শ্রমিকরা কাজ করতে না পেরে অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে বাঁশখালীতে কাজ করেও বেতন না পেয়ে নিজের ন্যায্য বেতন আদায়ের আন্দোলনে পুলিশের এমন গুলি ছোঁড়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। জনগণের অধিকার চর্চা বা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া পুলিশের দায়িত্ব হলেও প্রায়ই বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ কর্মসূচীতে পুলিশকে মারমুখী আচরণ করতে লক্ষ্য করা যায়।

আসক মনে করে, বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশের গুলি ছোঁড়া এবং এর ফলে প্রাণহানির ঘটনা অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। আসক কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে। একইসঙ্গে শক্তিপ্রয়োগ কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে কীভাবে আন্দোলন, বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ কর্মসূচী যথাযথভাবে পালনে সহযোগিতা করা যায়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর নির্দেশনা দিতে হবে।