‘বাংলাদেশকে ভালোবেসে ফেলেছি, কিছু দিতে চাই’

পার্ক তে গুনপ্রায় দুমাস ধরে মিরপুর সুইমিং পুলে নিবিষ্ট মনে সাঁতারুদের দীক্ষা দিয়ে চলছিলেন পার্ক তে গুন। অথচ তিনি জানেন না ফেডারেশন তার মেয়াদ বাড়াবে কিনা। তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই। আশায় বুক বেঁধে উদীয়মান ও সিনিয়রদের নিয়ে এক মনে তিন বেলা সাঁতারের নানান কৌশল শিখিয়ে যাচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ। তিনি এখনও মনে করেন তার চুক্তি বাড়াবে ফেডারেশন।  

দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ পার্ক তে গুনের সঙ্গে ফেডারেশনের চুক্তি ছিল তিন বছরের। প্রতি বছর শেষে তা নবায়ন হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে একবছর শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় বছরে তাকে রাখা হবে কিনা- এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত মার্চে চুক্তির মেয়াদের প্রথম বছর শেষ হয়েছে। এরপর নিজ দেশে ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন।

দীর্ঘদিন পর ছুটি কাটিয়ে ফিরে মে মাসে আবারো কোচিং শুরু করেন। দেরিতে দেশে ফেরার কারণ হিসেবে এই কোচ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বাবার মৃত্যুর কারণে দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল। আমাদের ওখানে বাবার মৃত্যুতে বেশ কিছুদিন কিছু নিয়ম-নীতি পালন করতে হয়। সেই কারণে বাংলাদেশে ফিরতে দেরি হয়েছে।’

প্রতিভা অন্বেষণ থেকে ৫২ জন ও সিনিয়র সাঁতারুদের মধ্যে ৫ জনকে নিয়ে অনুশীলন চলছে। অথচ তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন পার্ক তে গুন। তার আশা, ‘ফেডারেশনের সভাপতি আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। তাই কাজ করে যাচ্ছি। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারিনি। জানি না আমার মেয়াদ বাড়বে কিনা। আমি তো চাই বাংলাদেশের সাঁতারুদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে। কেননা বাংলাদেশকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। এই দেশে কোচিং করাতে চাই। কিছু একটা দিতে চাই।’

২০০৯ সালে প্রথম কোচ হিসেবে আসেন পার্ক তে গুন। তারপর বিরতি দিয়ে ২০১৬ সালে এসএ গেমসে আবারো দলের নেতৃত্ব দেন। তার কোচিংয়ে ভারতে গেমসে বাংলাদেশ দুটি স্বর্ণপদক জিতেছে। দেশব্যাপী প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি চলেছে তার মাধ্যমে। মিরপুরে আবাসিক ক্যাম্পে আছেন ৫৭ জন সাঁতারু।

তাই পার্ক তে গুন স্বপ্ন দেখছেন। দীর্ঘমেয়াদে অনুশীলনের মাধ্যমে এসএ গেমস সহ আরো নানান আসরে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে সাফল্য পাবে। সেই স্বপ্নের কথা জানিয়ে পার্ক তে গুন বলেন, ‘সেরা সাঁতারুদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দেশের জন্য কিছু একটা করার অপেক্ষায় আছেন। আগামী এসএস গেমসে আমি তো মনে করি ৪ থেকে ৫টি স্বর্ণপদক পাবো আমরা। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।’

যদি চুক্তি না বাড়ে তাহলে দেশে ফিরে যাবেন এই কোচ। বিকল্প হিসেবে একাধিক দেশ থেকে প্রস্তাব বিবেচনায় রাখবেন। পার্ক তে গুন বললেন, ‘আমি ৬৪টি জেলা ঘুরে ঘুরে সাঁতারু বের করে নিয়ে এসেছি। এদের ঘিরেই আমার স্বপ্ন। যে কারণে বাংলাদেশের প্রেমে পড়া। এখন ফেডারেশন যদি রাখতে না চায়, তাহলে কী করার আছে। বিকল্প হিসেবে অন্য দেশের প্রস্তাব বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে আশা করি বাংলাদেশের জন্য কিছু একটা করে দেখাতে পারবো। দীর্ঘমেয়াদে থাকতে পারলে সাফল্য আসবেই।’

আজই সাঁতার ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সভা আছে। সেখানে পার্ক তে গুনের চুক্তি নবায়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।