লর্ডসের মাঠকর্মী থেকে কিউইদের কোচ গ্যারি স্টিড

গ্যারি স্টিডভাগ্য বোধহয় একেই বলে! একসময় ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মেরিলিবোর্নের মাঠকর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন গ্যারি স্টিড। সেই ব্যক্তিটি পুনরায় একই মাঠে উপস্থিত! পার্থক্যটা শুধু মর্যাদাগত অবস্থান। নিউজিল্যান্ডের হেড কোচের ভূমিকায় পুনরায় সেই মাঠেই হাজির তিনি।

স্টিড মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবে একজন মাঠকর্মী হিসেবে ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন ১৯৯০ সালে। ২৯ বছর পর সেই মাঠে এলেন অন্য ভূমিকাতে! শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ঐচ্ছিক অনুশীলনে পুরণো সেই স্মৃতিতে ডুব দিলেন কিউই এই কোচ। মাত্র ১৮ বছর বয়সে লর্ডসের মাঠকর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল তার। লর্ডসে থাকার সময় জানালার কাঁচ থেকে শুরু করে স্কোরকার্ড বিলিসহ যাবতীয় অনেক কিছুই করতো হতো তখন। অথচ তখন হয়তো ভাবতেই পারেননি ২৯ বছর পর নতুন ভূমিকাতে একই মাঠের ব্যালকনিতে থাকবেন তিনি! যখন নাকি দূর থেকে বাকি কোচদের রণকৌশল সাজাতে দেখতেন ড্রেসিং রুমে। সেখানে সেই স্টিডই বিশ্বকাপের মতো আসরে দলকে প্রথমবারের মতো ট্রফি জেতাতে রণকৌশল সাজাতে ব্যস্ত!

তরুণ বয়সে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করলেও ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন নিরন্তর। তাই স্টিড খেলতে পেরেছেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত। ১৯৯৯ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তার। যদিও মাত্র ৫ টেস্টে খেলেই থেমে যেতে হয়েছে। গ্যারি স্টিড জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন এক বছরও হয়নি। গত বছর আগস্টে নিউজিল্যান্ডের কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বছর না ঘুরতেই তার কোচিংয়ে দল বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চের ফাইনালে। আর একটি ম্যাচ জিতলেই ইতিহাস গড়বেন। তেমনটি হলে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেওয়ার মিশনে নিজের নামটা আজীবনের জন্য ইতিহাসে লেখা হয়ে যাবে।

ঐচ্ছিক অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে অতীত স্মৃতি রোমান্থন করলেন গ্যারি স্টিড, ‘আমি ভাগ্যবান যে ১৯৯০ সালে এখানে মাঠকর্মী ছিলাম। আমার কাজের মধ্যে ছিল জানালার গ্লাস পরিষ্কার করা, স্কোরকার্ড বিলি করা। নতুন দায়িত্বে এখানে ফিরে আসা আমার জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখানকার ম্যাচটিতে আমার অনুভূতি ছিল অন্যরকম। এখন একে আরও বিশেষ উপলক্ষ বানাতে চাই।’

ক্রীড়া পরিবারের সন্তান গ্যারি স্টিড। তার পিতা ডেভিড কেন্টারব্যুরির হয়ে ৮০ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। একই দলের হয়ে খেলেছেন লিস্ট 'এ' ক্রিকেটেও। ব্যাটিং সত্তার সঙ্গে লেগস্পিনেও পারদর্শী ছিলেন গ্যারি স্টিড। যদিও তার টেস্ট ক্যারিয়ার লম্বা হয়নি। ১৯৯৯ সালের মার্চে ঘরের মাঠে হয় টেস্ট অভিষেক। ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সাদামাটা পারফরম্যান্সে শেষ ক্যারিয়ার। ৫ টেস্টের ৮ ইনিংসে ৩৪.৭৫ গড়ে  ২৭৮ রান করেছিলেন। সর্বোচ্চ ৭৮।

ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ করে নিউজিল্যান্ড হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের দায়িত্ব নেন এরপর। ২০০৮ সালে কোচ হন কিউই নারী ক্রিকেট দলের। তার কোচিংয়েই নিউজিল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল ২০০৯ সালে বিশ্ব নারী ক্রিকেট কাপের ফাইনাল ও ২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালও খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। 

এর বাইরে ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কেন্টারব্যুরির হয়েও কোচের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে তার। তারপর ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে পান নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব। এখন সেই ভাগ্যটাকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পালা!