আইসিসি ট্রফির ফাইনাল জীবন্ত হয়ে উঠলো তাদের কথায়

99249764_3392209754140065_1290954086983663616_n১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিস্মরণীয় একটি দিন। যেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে উঠেছিল নতুন সূর্য। সেদিন ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়েই প্রথমবার আইসিসি ট্রফি জয় করেছিল বাংলাদেশ। তার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে এদেশের ক্রিকেট।

বহু নাটকীয়তায় মোড়ানো সেই ম্যাচটি জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১ বলে  ১ রান। স্নায়ুক্ষয়ী সেই মুহূর্তে বোলার ছিলেন কেনিয়ান পেসার টনি সুজি। স্ট্রাইকে হাসিবুল হোসেন, অপর প্রান্তে খালেদ মাসুদ পাইলট। গ্যালারি থেকে শুরু করে তাঁবু দিয়ে বানানো ড্রেসিংরুমে তখন সবাই কোচের ভূমিকায়। দুই ব্যাটসম্যানকে একের পর এক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।

মঙ্গলবার তামিম ইকবালের লাইভ আড্ডায় আসা সাবেক তিন ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান ও খালেদ মাসুদ পাইলট ছিলেন আইসিসি ট্রফি জয়ী দলটির সদস্য। এদিন তাদের ভাষ্যে জীবন্ত হয়ে ওঠে সেই ফাইনাল।

‘মাঠের বাইরে থেকে কী বলছিলেন আপনারা?’- তামিমের এমন প্রশ্নের উত্তরে আকরাম খান বলেছেন, ‘বল কোথাও লাগুক, না লাগুক, দৌড়াও। ওটাই আমরা মাঠের বাইরে থেকে বলছিলাম। আমাদের ড্রেসিংরুম ছিল না, তাঁবু দিয়ে বানানো একটি ঘর। ওই মুহূর্তে আমাদের এতটা দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। জেতার পর আমরা আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি, অনেক বড় কিছু করে ফেলেছি।’

শেষ দিকের পরিস্থিতি নিয়ে আকরাম বলেছেন, ‘শেষ ওভারে এখন কিন্তু ১১ রান কোনও ব্যাপার না, কিন্তু তখন অনেক কঠিন ছিল। সবচেয়ে ভালো কাজটা করেছে পাইলট। নেমেই প্রথম বলে ৬ রান। এরপর পাইলট ও শান্ত মিলে যেভাবে শেষ করেছে, সেটা অসাধারণ।’

ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মোহাম্মদ রফিককে ওপেনিং নামানো হয়েছিল। বিশেষ কী পরিকল্পনা ছিল? তামিমের এমন প্রশ্নে আকরাম খান বলেছেন, ‘এই আইডিয়াটা এসেছিল নান্নু ভাইয়ের কাছ থেকে। তখন আমরা কোচ ম্যানেজারের মতামত জানতে গিয়েছিলাম। রফিক কিন্তু সুপার ট্যালেন্টেড খেলোয়াড়। দুর্জয় আর রফিক ওপেন করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এই কৌশল সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।’

আইসিসি ট্রফিতে সাফল্য পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তখনকার কোচ গর্ডন গ্রিনিজের । তামিমের সঙ্গে লাইভ আড্ডায় সাবেক তিন ক্রিকেটার এমনটাই জানালেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই দেশের ক্রিকেট চর্চটাকে আমূল বদলে ফেলেন তিনি। সেই কথা উঠে এলো আকরাম খানের জবানিতেও, ‘আইসিসি ট্রফিতে খেলতে যাওয়ার আগে গর্ডন আমাদের বিকেএসপিতে অমানুষিক ট্রেনিং করিয়েছিল। কীভাবে সাফল্য পেতে পরিশ্রম করতে হয়, সেটা গর্ডন দেখিয়ে গেছে। ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হতো অনুশীলন। শুরুতে রানিং, ওয়ার্মআপ। দুইঘণ্টা এসব করে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম পেতাম। এরপর আবার ব্যাটিং-বোলিং। দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিয়ে আবারও চলতো এমন অনুশীলন। অনেকটা বন্দি জীবনের মতো কেটেছিল আমাদের দিনগুলো।’

আকরামের কথা শেষ না হওয়ার আগেই পাইলট যোগ করেন, ‘নান্নু ভাই, আকরাম ভাইয়ের মনে আছে নিশ্চয়ই। পুরো দিনটা সে ব্যবহার করতো। আমরা জেলখানার মধ্যে ছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে একদিনের জন্য আমরা ঢাকায় আসতাম। এভাবে দিনের পর দিন আমরা অনুশীলন করেছি। এত পরিশ্রমের কারণেই আসলে আমরা আইসিসি ট্রফিতে সাফল্য পেয়েছিলাম।’