যুক্তরাজ্যের মাটিতে বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স

77dc66abda2d0f115bf4ff517cc21341-591d5a5d3d78a

একটা সময় আমাদের সঙ্গে সমান স্তরে খেলতো আইরিশরা। তাদেরকে পেছনে ফেলে আমাদের ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্নই তুলতো তারা। এমনকি কাল নিজেদের সামর্থ্যটা সবার কাছে তুলে ধরার একটা সুপ্ত বাসনা যে তারা ধারণ করেছিল, সে বিষয়েও কোনও সন্দেহ নেই।  

শুধু তাই নয়, হোম কন্ডিশনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে বেশ নির্লজ্জভাবে উইকেটকে সবুজ গালিচা বানাতেও কোনও সংকোচ বোধ করেনি। তেমন একটি ম্যাচেই নিজেদের প্রয়োগ ক্ষমতার আলোকে গতকাল বাংলাদেশ তাদের সেরা পারফরম্যান্স যুক্তরাজ্যের মাটিতে করলো। প্রতিপক্ষের শক্তির আলোকে হয়তো ব্যাটে বা বলে সেরা পরীক্ষাটা আমাদের দলকে দিতে হয় নি। তবে ম্যাচ থেকে দলগতভাবে ও ব্যক্তি পর্যায়ে যে উন্নতিগুলি ক্যাপ্টেন বা টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছে, তার চাহিদা দল মিটিয়েছে। পিচের চরিত্রের কারণে বা প্রতিপক্ষের শক্তি বা দুর্বলতাকে বিবেচনায় রেখে নতুন বলে আমাদের আক্রমণের সূচনা হতে দেখেছি দীর্ঘদিন ধরে এবং বিষয়টি আমাকে যথেষ্ট পীড়া দিত প্রায়শই।

হিথ স্ট্রিক বা কোর্টনি ওয়ালশের মতো বোলিং কোচ কাজ করার পরও আমরা নতুন বলে নিজেদের শক্তির ওপর আস্থা না রেখে পেসারদের পরিবর্তে ইনিংসের শুরুতেই তার ভাগিদার করি একজন স্পিনারকে, যার মূল কারণ প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা। এমনকি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গত ম্যাচে বোলিং সহায়ক কন্ডিশনেও তা ঘটতে দেখে সাংঘাতিক বিরক্ত লেগেছিল।

বাংলাদেশের জন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান কে হতে পারে তা আমরা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। এটা তাদের বিশেষায়িত কাজ। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় এত ভালো পেস বোলিং কোচ থাকার পরও বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ দুই প্রান্ত থেকে পেস বোলারদের হাতে রচিত হবে কিনা তা নির্ধারণ হওয়া এক বিস্ময়েরই নাম! বলতে গেলে নতুন বলে বল করাটাও একটা চর্চার ব্যাপার এবং তার ভালো ও উন্নয়নের দিক নিয়ে কাজ করাটা বোলিং কোচ এর কাজ, তাতে পরবর্তী ম্যাচে বোলার আরও কার্যকরী হন।

কাল নতুন বল মোস্তাফিজ এবং রুবেলকে শেয়ার করতে দেখে খুশি হয়েছি এবং কাল যারা খেলেননি সেই তাসকিন, শফিউল ও শুভাশীষও তা উপভোগ করেছেন। ‍দলে কোর্টনি ওয়ালশের মতো একজন কোচ রাখাটাও হয়তো সমর্থনযোগ্য মনে হয়েছে। দলের বাইরে থাকা আহত শহীদ, আল আমিন, উঠতি রাহি বা আবু হায়দার রনিরাও দলের বোলিং বিভাগের আক্রমণে পেসারদের গুরুত্ব পাওয়াটাকে স্বাগত জানাবে।

এই সিরিজে প্রথম বল করার সুযোগ পাওয়াটাকে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর সক্ষমতা একটা বড় সফলতা। মোস্তাফিজ ৪ উইকেট পেলেও তার সেরা নৈপুণ্যের থেকে বেশ দূরে আছেন এখনও। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তার কাটার কার্যকরী, ঠিক ততটা ছন্দে দেখা যায়নি বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে। যদিও তাকে ইয়র্কার লেন্থে বল করতে দেখার অপেক্ষায় রইলাম। তবে তার হারিয়ে যাওয়া ছন্দ বা আত্মবিশ্বাস তিনি অনেকখানি পুনরুদ্ধার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।

গত ম্যাচে সানজামুলকে খেলানোটার ভালো একটা দিক আছে। বল হাতে সাকিব ভালো না করলে দ্রুত সানজামুলকে আনা যাবে। যদিও কাল তাকে এত দেরিতে (২৯তম ওভারে) আনাটা পছন্দ হয়নি।

বোলিংয়ে সানজামুলকে আরও কিছু ওভারের ভাগিদার করা যেত। তবে কাল ব্যালবার্নিকে বোল্ড করা সাকিবের বলটিকে আমার সেরা ডেলিভারি মনে হয়েছে। বোলারের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে রিয়াদের জায়গায় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অফ স্পিন সক্ষমতার ওপর ক্যাপ্টেনের আস্থা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

এছাড়া কালকের সহজ টার্গেট আরও সহজতর করে ২৮ ওভারের আগেই ৮ উইকেটের জয় দলে আস্থা ফেরাবে। আর উদ্বুদ্ধ করবে একদিনের ক্রিকেটে র‌্যাংকিংয়ে ৬ নম্বর আসনটি অর্জনে আরও সচেষ্ট হওয়ার জন্য।

এই ধরনের উইকেট স্লো হলেও ট্রু বাউন্স থাকে। ফলে পেছনে গিয়ে খুব সহজেই খেলা যায় এবং আমাদের ব্যাটসম্যানরা তা দ্রুতই রপ্ত করে নিচ্ছে।

অতিরিক্ত স্ট্রোকস কমানো এবং পরিস্থিতির আলোকে মনোনিবেশ এবং তার পাশাপাশি ব্যাটিং ফর্ম ধরে রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকলে আমাদের ব্যাটিংয়ের গুণগত উন্নয়ন অবলোকন করা হবে অনেক উপভোগ্য।

দিনের শুরুতে সাব্বির রহমানের চমৎকার ক্যাচ নেওয়া দেখে মনে হয়েছিল কাল ব্যাট হাতে তিনি সফল হবেন। বাস্তবিক অর্থে কিছুটা সফলতা আছে, কিন্তু মাথা থেকে অস্থিরতা বের করে দিতে পারলে টুর্নামেন্টে দল তার কাছ থেকে সেরাটাই পেতে পারেন। আমি খুশি হবো দলের কর্তাব্যক্তির কেউ একজন তার সঙ্গে ডিনার করতে গিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে যাতে বলেন- এক সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তিন নম্বরে ব্যাট করতেন ভিভ রিচার্ডস, শ্রীলঙ্কার জন্য অরবিন্দ ডি সিলভা, এখন অস্ট্রেলিয়ার জন্য করে স্মিথ, ভারতের জন্য বিরাট কোহলি, আর বাংলাদেশ মনে করছে ৩ নম্বরে সাব্বির রহমানই উপযুক্ত। দল প্রতিটি বলে সাব্বিরের কাছ থেকে সমান মনোযোগ আশা করে এবং তাকে আউট করা বলটি যেন দিনের অন্যতম সেরা বল হয়!

/এফআইআর/এএআর/