দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা র্যাংকিংয়ে প্রথম সারিতে আছেন ধারাবাহিকতা, বিচক্ষণতা ও সর্বোপরি ক্রিকেট জ্ঞানের কারণে। তবে ইতোপূর্বের মতো তাদের এভাবে ভেঙে পড়ার কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে মানসিক অস্থিরতা। শুধু ম্যাচ জেতা নয়, নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা যে তারা নকআউট খেলায় চোক করেন না। এই বিষয়টি তারা মাথা থেকে বের করতে পারেননি। তাদের শটস খেলায় ভুল না হলেও ভুল করে বসেন রান হবে কিনা সেই বিচার বিবেচনায়।
সম্প্রতি ভারতের সবচেয়ে বেশি উন্নতির জায়গা তাদের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ও নিখুঁত থ্রোইং দক্ষতা। এটাই মাঝপথে তাদের ব্যাটিং ধসের মূল ক্ষেত্রটি তৈরি করে দেয়।
এত অলস সময়ের ব্যবধানে দু প্লেসিস তার দুই সঙ্গীকে রান আউট করার অপরাধে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং তিনি জানতেন কত বড় ক্ষতি ইতোমধ্যে বাঁচা মরার ম্যাচে হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় নিজেকে শান্ত করে ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হওয়ার আগে তিনিও শট নির্বাচনে ভুল করে বসেন!
একটি চমকৎকার অবস্থান থেকে এমনভাবে অবনমন, এরপর একটা বৃষ্টির বিরতি হতে পারতো মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে লড়াই করার প্রেরণা বা ভারতের মোমেন্টামকে স্তিমিত করার একটা সুযোগ। কিন্তু তা ঘটেনি বরং এমন নাজুক অবস্থায় তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার জন্য ভারতের ছিল উইকেট তুলে নেওয়ার মতো একাধিক পেস বোলার এবং তারা সেটাই করে দেখিয়েছেন। যখন প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও সুযোগের অপেক্ষা করতে হয়। তখন বোঝা যায় কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ ও সেরা কম্বিনেশনের চিন্তাকে মাথায় রেখে প্রথম একাদশ তৈরির কাজটি শুধু সেরা ১১ জনের নাম বসিয়ে দেওয়া নয়।
রান তাড়ার ক্ষেত্রে বিরাট কোহলি পৃথিবীর অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান এবং ইনিংসের ওপর তিনি সফল হওয়াতে মিডল অর্ডারের জন্য কাজটা সহজ হয়। তার সঙ্গে উইকেটে যেই থাকে, সে তার পরামর্শ পায় ও তার স্ট্রাইকরেট ভালো হওয়ায় সঙ্গীর ওপর বাড়তি কোনও চাপ আসে না। কোহলির ব্যাটিং ও সাম্প্রতিককালে শেখর ধাওয়ানের চমৎকার ফর্ম এই ১৯১ রান তাড়া করতে ভারতকে কোনও বেগ পেতে হয়নি।
কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা যতটা উজ্জল ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ বড় টুর্নামেন্টে। এই একই খেলোয়াড়রা কেন চাপে তাদের নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান এবং কেন তারা দল হিসেবে ভেঙে পড়ছেন; তার কারণ খুঁজে বের করাটা তাদের জন্য গবেষণা করার মতো একটি বিষয় এখন!
পক্ষান্তরে নকআউট পর্বে ভারত তাদের সেরাটা উজাড় করে দিতে অত্যন্ত পটু এবং সাম্প্রতিককালে ভয়ঙ্কর একটি দল যাদের সঙ্গে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে আছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার চমৎকার স্মৃতি। আমাদের দলটি এখন অনেক পরিণত এবং সেরা পারফর্ম করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। শুধু সৌম্য ও সাব্বিরের কাছ থেকে একটা ভালো শুরু অত্যন্ত জরুরি এই ম্যাচে ভালো একটা মোমেন্টাম পাওয়ার জন্য। শুধু ভালো শুরুই নয় নতুন বলে ওরা যাতে খেই হারিয়ে না ফেলে উইকেটে টিকে থাকে। যাতে দলের ওপর বাড়তি চাপ না বাড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। বোলারদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নতুন বলের কার্যকরী ফায়দা তুলে নিতে না পারলে মাঝপথে এসে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে বৃষ্টির ঝামেলা না থাকলে পরে ব্যাট করাটাই শ্রেয়তর হবে।
সেমিফাইনালে এত বড় টুর্নামেন্টে কোয়ালিফাই করাটা আমাদের বড় অর্জন। তাই বড় অর্জনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত। এজন্য আমাদের সামনে যে কয়দিন হাতে আছে তা মানসিক প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগানো উচিত। আমি এখানে মানসিক প্রস্তুতিটাকেই বড় মনে করছি। এই সুযোগেরই সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বাংলাদেশ লড়ুক এটাই আমার প্রত্যাশা থাকবে। কারণ আমরা জানি এখন কে আমাদের প্রতিপক্ষ এবং যে কয়দিন হাতে আছে; লড়াই করার জন্য মানসিক প্রস্তুতিটা তাই মুখ্য। এখানে রাতারাতি তো উন্নয়ন সম্ভব না, এখানে মানসিক প্রস্তুতিটাই বড়। আর এই খেলায় আমাদের সেরা দেওয়ার দিকেই নজর থাকবে। আর এ ধরনের টুর্নামেন্টে বড় বিরতি পেলে মানসিক চাপটা বাড়তে থাকে। এই চাপটাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যক্তি পর্যায়ে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। দলনায়ককে তার সেরাটা দেখানোর অন্যতম সুযোগ এটা বলে আমি মনে করি । তাই আশা করছি চমৎকার একটা লড়াই দেখতে পাবো।