অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই জয় অসাধারণ

.টেস্ট ম্যাচ তার প্রকৃত সৌন্দর্যের সব রং-রূপ নিয়ে হাজির হয়েছিল মিরপুরে। প্রত্যেক দিনের আলাদা আলাদা সেশনের নাটকীয়তায় দারুণ উপভোগ করলাম ম্যাচটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই জয় অসাধারণ।

অভিনন্দন সব খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও অধিনায়ককে স্মরণীয় এই সাফল্যের জন্য। কোচ ও অধিনায়ক দুটি টেস্টই জিততে চান বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেটা যে তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন ও সামর্থ্য রাখেন, তা আমাদের সামনেই করে দেখালেন। আমাদের অনেকের কাছে হয়তো মনে হয়েছিল এখনও এত বড় মন্তব্য করার জায়গায় আমরা পৌঁছায়নি। কিন্তু এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ লিখল নতুন ইতিহাস। অবশ্য এখনও দ্বিতীয় টেস্টের লড়াইটা বাকি আছে, তবে শুরুতেই এগিয়ে যাওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়ানডের মত কোনও দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জেতা খুব সহজ কাজ নয়। বড় দলকে বধ করার কাজটি দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডকে দিয়ে শুরু এবং তার ধারাবাহিকতা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ধরে রাখার পেছনে খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক কঠোর অনুশীলন, কোচের পরিকল্পনা কৌশল এবং চাহিদা অনুযায়ী কিউরেটরের পিচ তৈরির সক্ষমতা প্রশংসার দাবিদার। তার সঙ্গে দল নির্বাচন নিয়ে যতই সমালোচনা হোক না কেন, তাদের পরিকল্পনার একটা বড় অংশই আলোর মুখ দেখেছে। তাই নির্বাচকদেরও অভিনন্দন জানাই।

গতকাল (মঙ্গলবার) বলেছিলাম, প্রথম সেশনের ৯০ মিনিটের মধ্যেই বোঝা যাবে এই ম্যাচে আমরা ফেরত আসতে পারব কিনা। প্রথম ঘণ্টার পর মনে হচ্ছিল ম্যাচ জেতার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জন্য। কিন্তু আজ দুজন সেট ব্যাটসম্যান সহ ৩ উইকেট প্রথম ৯০ মিনিটে তুলে নিয়ে দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে খেলতে দেয়নি বাংলাদেশ। সঙ্গে লড়াই করে টেস্ট ম্যাচ জেতাটাকে একটা অভ্যাসে পরিণত করলো ধারাবাহিকভাবে।

গতকাল এটাও বলেছিলাম, ম্যাচ জিততে হলে সাকিবকে বল হাতে মুখ্য ভূমিকায় থাকতে হবে। তিনি তা করে দেখালেন। তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়ে যোগ্য সমর্থন দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুতে ও শেষ পর্যায়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে যথেষ্ট উজ্জ্বল ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজও।

তামিম, সাকিব ও মুশফিকের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে মিরাজের ছোট্ট ইনিংসই আমাদের বোলারদের লড়াই করার পুঁজি জুগিয়েছে। বল হাতে সাকিব ছিলেন ভয়ঙ্কর। পিচ যদি সহযোগিতা করে, তাহলে টেস্ট ম্যাচে তিনি বিরতিহীনভাবে বল করতে ভালোবাসেন, উপভোগ করেন, উইকেট নেওয়ার পর আনন্দের জোয়ারে ভাসেন। আর ঠিক তখনই বোঝা যায় এই টেস্টই জেতার জন্য সবার মতো তিনিও কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে লিখেছিলাম আমাদের দেশে অস্ট্রেলিয়া এলো ১১ বছর পর টেস্ট খেলতে। পরেরটি সিরিজটি যদি ৪-৫ বছর পরে হয়, তাহলে সাকিব, তামিম, মুশফিক- আমাদের এই তিন সিনিয়র ক্রিকেটাররা তাদের সেরা সময়টায় থাকবেন কিনা, সে ব্যাপারে সংশয় আছে। তাই এই সিরিজে তাদের সেরা ফর্মে দেখতে চাই। তারাও জানেন এটাই তাদের সেরা সময় সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর। এই ত্রিরত্নের মেধাবী ক্রিকেট আমাদের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল।

একই সঙ্গে নতুন করে সুযোগ দিল এই টেস্টে অনেকের ব্যর্থতা দ্রুত ভুলে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য নিজেদের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার। কারণ দ্বিতীয় টেস্টও যে বাংলাদেশ জিততে চায়, তার প্রমাণ দিতে হবে তো মাঠেই।