মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সোমবার নেদারল্যান্ডস থেকে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। বিমানবন্দর থেকে ক্রিকেটাররা সরাসরি চলে যান মিরপুরের বিসিবি একাডেমিতে। সেখানেই ফাহিমা পেস বোলার থেকে লেগস্পিনার হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন সংবাদ মাধ্যমকে।
২০০৯ সালে মাগুরায় ক্রিকেটে হাতেখড়ি ফাহিমার। তবে এসএসসি পরীক্ষার কারণে দুই বছর খেলতে পারেননি। ২০১১ সালে আবার শুরু করেন খেলা। ঘরোয়া ক্রিকেটে বরিশাল বিভাগ মোহামেডানের হয়ে ভালো খেলে জাতীয় দলের পথ প্রশস্ত করেন তিনি।
ফাহিমা বললেন, ‘শুরুতে জুনিয়র হওয়ার কারণে সুযোগ পেতাম না। ২০১২ সালের শেষ দিকে অনুশীলনে ভালো করায় কোচ আমাকে ওপেনিংয়ে সুযোগ দেন। পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হাফসেঞ্চুরি এবং বেশ কয়েকটি উইকেট পেয়ে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাই।’ টিভিতে খেলা দেখে ক্রিকেটের প্রেমে পড়ে যাওয়া এই অলরাউন্ডার জানালেন, “লেগস্পিন নিয়ে আমার তেমন ধারণা ছিল না। স্লো মিডিয়াম পেসার হিসেবে মাগুরা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার সময় একদিন মজা করে লেগস্পিন করি। বলটা বেশ টার্ন করেছিল। তখন ওখানকার অমিত ভাইয়া আমাকে বলেন, 'তুমি কি লেগস্পিন করবে?’ আমাকে তিনি লেগস্পিনার হতে উৎসাহিত করেন। সেদিন থেকেই মূলত লেগস্পিন বোলিং শুরু আমার।”
২০১৩ সালে জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পাওয়া ফাহিমার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে বড় বোনের বিশাল অবদান। বোনের কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তার, ‘আমার বড় বোন আসমা আঁখি আমাকে অনুশীলনে নিয়ে যেত। আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে সে। ক্রিকেট খেলার জন্য মা কোনও বাধা দিত না। তবে বাবা আর ভাইয়া বাধা দিত। স্কুলের অ্যাথলেটিকসে সব সময় অংশ নিতাম। অনেক জায়গায় খেলতেও গিয়েছি। স্কুল থেকে খেলতে গেলেও ভাইয়া বাধা দিত। কিন্তু আপু আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে যেত। আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে আপু।’
নেদারল্যান্ডসে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের আগে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে একটি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সেই সিরিজে তেমন ভালো বোলিং করতে পারেননি ফাহিমা। তবে বাছাই পর্বে জ্বলে উঠে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ে বড় অবদান রেখেছেন তিনি। ফাহিমা জানালেন, ‘আয়ারল্যান্ড সিরিজে ভালো বোলিং করতে পারিনি, তাই তেমন উইকেটও পাইনি। এরপর আলাদা করে কোচের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে চাপ না নিয়ে নিজের স্বাভাবিক বোলিং করতে বলেন। আমি কোচের সঙ্গে আলাদা অনুশীলন করেছি, যার রেজাল্টও পেয়েছি।’
মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হ্যাটট্রিক করে ফাহিমা গর্বিত , ‘মেয়েদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম হ্যাটট্রিক করে খুবই ভালো লেগেছে। এই অনুভূতি অন্যরকম। লক্ষ্য ছিল ভালো করার, তবে যতটা আশা করেছিলাম তার চেয়েও বেশি পেয়েছি। সতীর্থরা অনেক সাহায্য করেছে। ওদের সাহায্য ছাড়া হ্যাটট্রিক করা সম্ভব হতো না। পাশাপাশি কোচ আর সহকারী কোচ অনেক সাহায্য করেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’