প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যাওয়া জয়ের আনন্দ শ্রীলঙ্কার

প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা শ্রীলঙ্কাছন্নছাড়া শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট- এমন কথা বলতে এখন দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে। মাঠে ও মাঠের বাইরের বিতর্ককে সঙ্গী করে প্রথম এশীয় দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যে তারা জিতেছে টেস্ট সিরিজ। অনভিজ্ঞ একটি দল নিয়ে আফ্রিকান দেশটিতে পা রেখে এমন সাফল্যের প্রত্যাশা কিন্তু কখনও করেননি শ্রীলঙ্কার নতুন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আগে টেস্ট সিরিজ জয়ের কীর্তি ছিল কেবল ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার। বিশ্ব পরাশক্তিদের কাতারে এবার শ্রীলঙ্কা পৌঁছালো বিভিন্ন সমস্যা আর জটিলতা মাথায় নিয়ে। দেশটির ক্রিকেট রসাতলে ডুবছে এমন তীব্র বাক্যবাণ ছুটে আসছিল ক্রিকেটারদের দিকে।

নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজে বাজে অভিজ্ঞতার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাদ পড়েন নিয়মিত অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল। দায়িত্ব পড়ে নতুন অধিনায়কের কাঁধে। ১৭ জনের বাছাই করা দলে ছিল চার নতুন মুখ, ৮ জনই খেলেছেন ৫টি বা তার চেয়েও কম টেস্ট। এমন দল নিয়ে তো সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা করা কম সাহসের কথা নয়!

কিন্তু ড্রেসিংরুমে ঠিকই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে খেলোয়াড়দের মধ্যে। করুনারত্নের কাছে ছিল সেগুলো কথার কথা, ‘আমরা এসব গুরুত্ব দিয়ে নেইনি। আমি মনে করি এমন কিছু করতে পারবো কখনও প্রত্যাশা করিনি আমরা। কিন্তু যখন জিততে শুরু করলাম, তখন বিশ্বাস চলে এলো মনে। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলাম। জয়ই ছিল চূড়ান্ত লক্ষ্য। জানতাম, সঠিক কাজটা করলে ফল আমাদের জন্য ভালো হবে। দলের অনেকে এমন কথা বলছিল, কিন্তু আমরা সেটা আমলে নেইনি। কারণ সঙ্গে ছিল পারিপার্শ্বিক চাপ, যেটা সহজ ছিল না।’

চাকরি ঝুলিয়ে রেখে দলকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিল চোটে, কেউ বা বাদ পড়েছেন। এমন অবস্থায় থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ করার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে করুনারত্নে বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-০ তে হারানো সহজ নয়। আমরা এখানে এসেছিলাম আন্ডারডগ হয়ে। কিন্তু আগের সফরগুলো থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছিলাম, আর এই কন্ডিশনে খেলোয়াড়রা সত্যিই উজার করে দিয়েছে নিজেদের। এজন্যই আমরা এখন এখানে। এটা আমাদের জন্য বিশাল অর্জন।’

১৯৭ রানের লক্ষ্যে ২ উইকেটে ৬০ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিস ও ওশাদা ফার্নান্দোর উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে মুগ্ধ অধিনায়ক, ‘আমরা তাদের মাঠে গিয়ে স্বাভাবিক খেলা খেলতে বলেছিলাম। তাদের বলেছিলাম যদি রান নিতে পারো কিংবা ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে মারতে পারো, তবে সেটাই করো। প্রথম ঘণ্টায় মেন্ডিস আর ওশাদা ঠিক সেটাই করেছে। যখন আমরা ওভাবে খেললাম, তখনই ব্যাকফুটে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।’

প্রায় তিন মাস ধরে দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দল। এমন সময়ে খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত রাখতে করুনারত্নের মন্ত্র ছিল ‘হাসতে থাকো’ আর ‘উপভোগ করো’। না বললেও চলে, সেটা দারুণ কাজে দিয়েছে। বাঁহাতি ওপেনার বলেছেন, ‘ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল সফর (নিউজিল্যান্ডে), তার মানে দেশের বাইরে আমরা প্রায় তিন মাস। যদি আপনি এই সময় উপভোগ না করেন এবং মন খোলা না রাখেন, তাহলে সেরাটা দিতে পারবেন না। আমি জানি আমাদের দলে কেমন প্রতিভা আছে, তাদের কাছেই ভালো কিছু চেয়েছি।’

নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করুনারত্নে, ‘দলের জন্য, ভক্তদের জন্য আমরা ভালো কিছু করতে চেয়েছিলাম। দিন শেষে আমরা সত্যিই ভালো কিছু করেছি।’