সাউদাম্পটন থেকে গন্তব্যে পৌঁছাবে তো বাংলাদেশ?

অনুশীলনে মগ্ন তামিমসাউদাম্পটন বন্দর থেকেই ১৯১২ সালে ছেড়েছিল টাইটানিক জাহাজ। কিন্তু নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ডুবে যায় জাহাজটি, সলিল সমাধি হয় বেশির ভাগ যাত্রীর। এই সাউদাম্পটন থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়ার তিনটি দলকে হারানোর মিশন। সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে পরের তিন ম্যাচ জিততেই হবে মাশরাফিদের। সাউদাম্পটনে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হচ্ছে টিকে থাকার লড়াই। মাশরাফিরা কি পারবে গন্তব্যে পৌঁছাতে?

নাকি সাউদাম্পটন বন্দর ছেড়ে যাওয়া টাইটানিকের মতো এই শহরের রোজ বোল স্টেডিয়ামে থমকে যাবে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আজই (সোমবার)। এদিন বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় ম্যাচটি শুরু হবে। সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, গাজী টেলিভিশন, মাছরাঙা ও স্টার স্পোর্টস ১।

অনুশীলনে ফুরফুরে সাকিবরাক্রিকেটের আঁতুরঘর বলতে হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবকে বোঝায়। আগে শহরের মধ্যেই ছিল কাউন্টির মাঠ, এখন সেটা শহরের কিছুটা বাইরে এজিয়েস বোলে। স্টেডিয়ামের সঙ্গেই লাগানো পাঁচতারা হিল্টন হোটেল। হোটেল থেকেই ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা পৃথিবীর আরও কোনও মাঠে নেই। এখানে বাংলাদেশ প্রথমবার খেলতে নামছে। সাউদাম্পটনে জিতলেই কেবল বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে ও লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের গুরুত্ব থাকবে। নয়তো ওই দুটি ম্যাচ কেবলই আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নেবে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই সেটা চাইছে না।

রোজ বোল স্টেডিয়ামে রবিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় দল নিয়ে অনুশীলন শুরু করেন মাশরাফি। নেটে শুরুতেই ব্যাটিং করেন তামিম ইকবাল। এরপর একে একে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, লিটন নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানদের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প চিন্তা করছে না বাংলাদেশ। তবে গত বছর আরব আমিরাতে এশিয়া কাপের দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ভুগিয়েছে মাশরাফিদের। সেই শিক্ষা থেকেই সতর্ক বাংলাদেশ। ঠাণ্ডা মাথায় আফগানদের মোকাবিলা করতে শিষ্যদের বলেছেন কোচ স্টিভ রোডস।

অনুশীলনে মোস্তাফিজ ও সৌম্যদুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য বাংলাদেশ এগিয়ে। ৭ ম্যাচ খেলে চারটি জিতেছে তারা। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। গত বছরের এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান জিতলেও সুপার ফোরের লড়াইয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে একবারই আফগানদের বিপক্ষে লড়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ক্যানবেরার ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ১০৩ রানে।

বিশ্বকাপে এই সাফল্য ধরে রাখতে দলগত পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই মাশরাফিদের সামনে। তবে এই উইকেটকে ভালোভাবে বুঝতে না পারলে বিপদে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। দুই দিন আগে এখানেই ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। বোঝাই যাচ্ছে রোজ বোলের এই উইকেটে স্পিনাররা ভালো সুবিধা পাবে। এই ধরনের উইকেটে ২৭০ রানকে নিরাপদ স্কোর বলা যায়। মাশরাফি সরাসরি না বললেও তার কথাতে তেমনই ইঙ্গিত, ‘একই উইকেটে খেলা হবে। আমার ধারণা স্পিন কাজ করবে ভালোভাবে। অন্য উইকেটের মতো হয়তো তিনশ রান লাগবে না। তবে এতটুকু নিশ্চিত এখানে ব্যাটিং করা সহজ হবে না।’

অনুশীলনের এক ফাঁকে মাশরাফিম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ দল যখন অনুশীলন করছিল, তখন আঁড়চোখে তাদের দেখছিলেন আফগানিস্তান কোচ ফিল সিমন্স। নিজেদের রণকৌশল সাজাতেই হয়তো প্রতিপক্ষ শিবিরে চোখ রেখেছিলেন তিনি। শনিবার ভারতের বিপক্ষে খেলার ধকল কাটিয়ে উঠতে রবিবার অনুশীলন করেনি আফগানরা। অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই হোটেলে ফিরে যান। এই সময়ে বাংলাদেশের অনুশীলন দেখেন আফগান হেড কোচ।

সংবাদ সম্মেলনে আফগান অধিনায়কের কণ্ঠে বাংলাদেশের প্রতি সমীহই দেখা গেলো, ‘আমরা এরই মধ্যে এই উইকেটে খেলেছি, কিন্তু ক্রিকেট খেলা নির্ভর করে বর্তমানের ওপর। আপনি কেমন খেলেন, কন্ডিশন কেমন; বিশেষ করে ইংলিশ কন্ডিশনে। গতকাল ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, আমাদের জন্য ভালো ছিল, দুই দলের জন্যই। আমরা হেরেছি, কিন্তু ভালো কিছুও করেছি। বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও বেশি চেষ্টা থাকবে।’

নেটে ব্যাট হাতে সাকিববাংলাদেশের একাদশে দুটি পরিবর্তন আসতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে না পারা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন ফিরতে পারেন। মোসাদ্দেকের ফেরার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও সাইফউদ্দিনের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। টসের আগে তার সবশেষ অবস্থা দেখেই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট। একাদশে পরিবর্তন আসুক কিংবা না আসুক আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে নিশ্চিত। বিশেষ করে স্পিনত্রয়ী মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানকে সাবলীলভাবে খেলতে না পারলে স্কোরবোর্ডে এর প্রভাব পড়বে। তাদের মোকাবিলায় সিনিয়র ক্রিকেটারদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে, নয়তো সাউদাম্পটনে শেষ হয়ে যাবে মাশরাফিদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন।

সমর্থকদের প্রত্যাশা সাউদাম্পটন ছেড়ে যাওয়া টাইটানিকের মতো বাংলাদেশের হারিয়ে যাবে না। সেমিফাইনালে ওঠার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর মিশন এখান থেকে শুরু হবে জয় দিয়ে, এরপর না হয় ভারত-পাকিস্তান শিকারের চিন্তা করা যাবে!