লর্ডসের ব্যালকনিতে বিষণ্ন মাশরাফি

মাশরাফিভারত ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। পাকিস্তান ম্যাচের আগেও একই চিত্র। কী হলো মাশরাফির? মিডিয়া ম্যানেজার রাবেদ ইমাম জানিয়ে গেলেন, ‘কোনও কারণ নেই। মাশরাফি ভালো আছে, এমনিতেই আসেনি।’ কিন্তু মাশরাফির জীবন দর্শনে ‘এমনি’ বলে কিছু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। লর্ডসের ব্যালকনির দৃশ্যেও মিডিয়া ম্যানেজারের ‘আশ্বাস’ ঠিক ভিত পায় না!

ইতিহাস-ঐতিহ্যে লর্ডস ক্রিকেটের তীর্থস্থান। ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটির ব্যালকনিতে অনেক সুন্দর মুহূর্তের জন্ম হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটে আছে সম্ভবত সৌরভ গাঙ্গুলির জার্সি ওড়ানোর দৃশ্য। সংবাদ সম্মেলনে না আসা মাশরাফিকে পাওয়া সেই ব্যালকনিতে। আনমনে বসে আছেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক। শূন্য দৃষ্টিতে কী যেন ভাবছেন। যে ভাবনাগুলো হয়তো এক সুতোয় গাঁথতে পারছেন না। বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন বলেই কী তার এই বিষণ্নতা?

এই মাশরাফিকে আগে কখনও দেখা যায়নি। শুক্রবার ম্যাচ, অথচ অনুশীলনেও আসেননি তিনি! লর্ডসে দলের সবাই অনুশীলন করলেও তিনি তখনও ব্যালকনিতে বসা। এমনকি স্টিভ রোডসের সংবাদ সম্মেলনে শেষ করে বের হওয়ার সময়ও তাকে পাওয়া গেল ব্যালকনিতেই। অন্য সব দিন সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডায় মাতলেও সেই রুটিনেও ব্যত্যয়!

গত কিছুদিন মাশরাফির অবসর নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের নায়ক সেই আলোচনায় কিছুটা বিরক্ত। বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগেই যেখানে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন ক্রিকেট ছাড়ার, এরপরও বারবার একই প্রশ্ন সামলাতে হচ্ছে তাকে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হেরে সংবাদ সম্মেলনে আসেননি, পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিনও তাই। দুটো সংবাদ সম্মেলনই সামলাতে হয়েছে প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে। এরপরও বেশিরভাগ প্রশ্নে জুড়ে ছিলেন মাশরাফি। এই পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতেই কী তার ‘আড়ালে’ থাকা?

অবশ্য সংবাদ সম্মেলনের পর পাওয়া গেল মাশরাফিকে। অনুশীলন শেষে দলের সবাই যখন টিম বাসে করে ফিরতে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন, শেষ মুহূর্তে ধীরপায়ে এগিয়ে এলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে না গেলেও প্রশ্নের বান থেকে রেহাই পেলেন না। আপনার অবসর নিয়ে এতো আলোচনা? শুকনো হাসিতে মাশরাফি বলে গেলেন, ‘ঘোষণা দিলে তো জানতেই পারবেন।’

২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে হুট করেই টি-টোয়েন্টির থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মাশরাফি। কাউকে কিছু না বলে, টস করতে গিয়ে ঘোষণা দেন অবসরের। এবারও এমন কিছু হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা না দিলেও বিশ্বকাপে যে আগামীকালই (শুক্রবার) শেষ ম্যাচ খেলছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাছাড়া মাশরাফি দিনকয়েক আগেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কানাডার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল মাশরাফির বিশ্বকাপ যাত্রা। সেই যাত্রা শেষ হচ্ছে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই ম্যাচের আগে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে অবসরের আলোচনা থাকলেও তিনি ‘নীরব’।

বিশ্বকাপে মোটেও ভালো সময় কাটেনি মাশরাফির। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে এবারের মতো বাজে সময় খুব কমই এসেছে তার ক্যারিয়ারে। ৭ ম্যাচের মাত্র একটিতে নিয়েছেন ১ উইকেট। ১০ ওভার শেষ করেছেন মাত্র একবার! অথচ বিশ্বকাপের আগেও ছিলেন সেরা ছন্দে। সেজন্য অবশ্য হ্যামস্ট্রিং চোটও কিছুটা দায়ী।

নিজের ফর্মহীনতা, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়া এবং অবসর নিয়ে বাইরের আলোচনা— অনেক ভাবনাই ভিড় করেছে মাশরাফির মনে। লর্ডসের ব্যালকনিতে সেই ভাবনাগুলোই হয়তো বিষণ্ন করে তুলেছিল মাশরাফিকে!