অবসরের সিদ্ধান্তে আরও সময় দরকার মাশরাফির

মাশরাফিবিশ্বকাপের আগে থেকে মাশরাফি মুর্তজা ও অবসর একই সমান্তরালে হেঁটে চলেছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আসর চলার সময়ও পিছু ছাড়েনি, বরং শেষ দিকে প্রশ্নের তীরটা ছিল আরও তীক্ষ্ণ। মাশরাফি নামটা বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশের এত বড় অংশ জুড়ে আছে যে, তার ভবিষ্যৎ জানার আগ্রহ চরমে থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অবসর বিষয়ক প্রশ্নের মুখে পড়াটা ‘রুটিন’ হয়ে গেছে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের জন্য।

বিশ্বকাপ শেষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেবেন মাশরাফি, এই ভাবনা ছিল মোটামুটি বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেট ভক্তের মনে। যদিও বিশ্বকাপ চলাকালীন এই পেসার জানিয়েছিলেন, ক্রিকেটের বিশ্ব আসর শেষে আরও কিছুদিন ‍আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চান তিনি। ইতিমধ্যে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মাশরাফির সেই কথার স্পষ্টতা ফুটে ওঠে শ্রীলঙ্কা সফরে তাকে অধিনায়ক করে ঘোষিত স্কোয়াড দেখে।

তবুও অবসর বিষয়ক প্রশ্ন থেকে রেহাই নেই তার! শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আরেক দফা একই বিষয় সামলাতে হয়েছে এই পেসারকে। অবসর নিয়ে এখনও ভাবছেন তিনি। প্রেক্ষাপট পাল্টে বলা কথাটাই শোনালেন আরেকবার, ‘এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। কারণ (অবসর নিয়ে) চিন্তা করিনি কিছু। খেলতে যাচ্ছি, ওখানে খেলারই চিন্তা করছি। এরপর অনেক দিন খেলাও নেই, এটাও একটা ব্যাপার। সেরকম কিছু হলে আসার পর চিন্তা করব। আমার কাছে খেলা ছাড়াটা অনেক বড় ব্যাপার। সুতরাং অবশ্যই একটু সময় নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’

তবে শ্রীলঙ্কায় যে শেষবার যাচ্ছেন, সেটা নিশ্চিত বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘শ্রীলঙ্কায় শেষ ট্যুর, এটা বলতে পারি। যেহেতু আর খেলা নেই। শ্রীলঙ্কা অবশ্যই শেষবারের মতো যাচ্ছি, বিশ্বকাপের মতোই বলছি। আসার পর হয়তো একটু সময় পাবো, সময় নিয়ে চিন্তা করে...।’ বাকিটা শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে এসে ভাবতে চান মাশরাফি।

এরপরও কি অবসর প্রশ্ন পিছু ছাড়বে তার? বিশ্বকাপের দৃশ্যপট কিন্তু তা বলছে না। কারণ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে ‘অবসর নিচ্ছি না’ মন্তব্য করার পরও প্রশ্নের বান থামেনি। এতে মাশরাফির বিরক্তি নেই অবশ্য, ‘সত্যি বলতে ‍আমি বিব্রত হইনি, আর এটা নিয়ে হতাশাও নেই। কারণ প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজটাই করবে, এটাই স্বাভাবিক।’

উদাহরণ হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে সামনে আনলেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক, ‘মহেন্দ্র সিং ধোনির কথাই বলি। তার ধারে কাছেরও খেলোয়াড় নই আমি। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১০ হাজার রান। প্রতিটি প্রেস কনফারেন্সেই তাকে এই (অবসর) প্রশ্ন করা হয়। আমার কাছে মনে হয়, এটাকে প্রফেশনালি দেখা উচিত। আমি এভাবেই দেখি। আমার জায়গাটা সবসময় ক্লিয়ার।’

বাস্তবতা আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন তিনি পরের কথায়, ‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে আমি নিজের সেরাটা পারফর্ম করতে পারিনি। অধিনায়ক হিসেবেও সেরাটা দিতে পারিনি। সবার প্রত্যাশা ছিল দল সেমিফাইনালে যাবে। আমরা সেখানেও ব্যর্থ। প্রশ্নগুলো আসতেই পারে।’

বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঝেড়ে শ্রীলঙ্কার সিরিজকে ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ হিসেবে দেখছেন মাশরাফি, ‘যেহেতু বিশ্বকাপে আমাদের ফল ভালো হয়নি, সেই চিন্তা-ভাবনা অবশ্যই আছে। আমাদের একটা সুযোগ আছে যে, আবার পজিটিভ দিকে আসার। আশা করি সবার সেই মানসিকতা আছে। শ্রীলঙ্কায় ভালো খেলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’

লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে মাশরাফির প্রত্যাশা, ‘আমার কাছে মনে হয়, দুই দলই সমান। হোমে তারা সবসময় ভালো খেলে। একই সঙ্গে তাদের এই টিম একসঙ্গে অনেক দিন ধরে খেলছে। তাছাড়া ওদেরও বিশ্বকাপে ভালো কিছু স্মৃতি আছে, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে, কিছু ম্যাচ ওরা খুব ভালো খেলেছে। আর নিদাহাস ট্রফির পর থেকে একটা উত্তেজনা সবসময় কাজ করে অনফিল্ডে। এটাও ধরতে হবে। সবকিছু মিলে আমার মনে হয়, কারও জন্যই সহজ হবে না।’