২৪১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা সাবধানেই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় চাপে রয়েছে সফরকারীরা। হারিয়েছে ৭ উইকেট। তবে ব্যর্থতার ভিড়ে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। ৪০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৭৯ রান! ক্রিজে আছেন সাকিব আল হাসান (৬৬) ও সাইফউদ্দিন (৩)।
শুরুটা সাবধনে করলেও চাতারার ষষ্ঠ ওভারে অল্পের জন্য বেঁচে যান তামিম ইকবাল। অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুশ করতে গিয়ে এজ হয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো ব্রেন্ডন টেলরের হাতে পড়ার আগেই বলটি ড্রপ খেয়ে যায়!
দশম ওভারে বেশি আগ্রাসী হতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন তামিম। লুক জঙউইর প্রথম বলটি চার মেরেছিলেন পয়েন্ট-কভার পয়েন্ট দিয়ে। তৃতীয় বলেও একই জায়গা দিয়ে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বেশি ওপরে উঠে যাওয়ায় সতর্ক রাজা এক ডাইভ দিয়ে অসাধারণ ক্যাচে তালুবন্দি করেন তামিমকে। ওয়ানডে অধিনায়ক ৩৪ বলে বিদায় নেন ২০ রান করে।
জঙইউর ১১.১ ওভারে অল্পের জন্য রানআউট থেকে বেঁচেছেন লিটন। তবে স্টাইকিং প্রান্তে ফিরে যাওয়ার পথে জিম্বাবুয়ে কিপারের সঙ্গে সংঘর্ষে কাঁধে আঘাত পেয়েছিলেন। তার পরের ওভারেই এনগারাভার বলে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন ৩৩ বলে করেছেন ২১ রান। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর একই ভুল করেন মোহাম্মদ মিঠুনও। জঙউইর শরীর থেকে যথেষ্ট বাইরের বল পুশ করতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়ে দেন কভার পেয়েন্ট। ডাইভ দিয়ে মিঠুনের ক্যাচ নেন মেধেভেরে। অনেক দিন লম্বা ইনিংস খেলতে না পারা মিঠুন ফিরে যান দুই রান করে।
দ্রুত তিন উইকেট পতনের পর চাপে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন মোসাদ্দেক। জিম্বাবুয়ের মিসফিল্ডে বাড়তি রান নেওয়ার লোভ করতে গিয়ে রানআউট হয়েছেন নন স্ট্রাইকে থাকা এই ব্যাটসম্যান। মোসাদ্দেক ফিরেছেন মাত্র ৫ রান করে।
এমন পরিস্থিতিতে চাপ মুক্ত হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে বাংলাদেশের। সেই কাজটিই করছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব। ৫৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি ভাঙে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। মুজাবারাবানির বাড়তি বাউন্সের বলে কাট করতে গিয়েই এজ হয়ে জমা পড়েন কিপারের গ্লাভসে! মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ২৬ রানে। জুটি ভেঙে যেন আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে সফরকারীরা। কোথায় থিতু হওয়ার মানসিকতা দেখাবেন, সেখানে অযথা শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন মিরাজ। অফস্পিনার মেধেভেরের ঘূর্ণিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়েই ডিপ মিড উইকেটে তালুবন্দি হন ৫ রান করা মিরাজ।
চাপে পড়ে যাওয়া এই পরিস্থিতিতে আফিফ জুটি গড়ার বার্তা দিচ্ছিলেন ঠিকই। কিন্তু এগিয়ে এসে শট খেলার লোভ সংবরণ করতে না পারার খেসারত দিতে হয় তাকে। সিকান্দার রাজার ঘূর্ণিতে স্টাম্পড হয়ে ১৫ রানে ফিরে যান আফিফ। কঠিন এই পরিস্থিতিতেই অপরপ্রান্ত আগলে ব্যাট করে চলেছেন সাকিব। ব্যাট হাতে অচেনা অলরাউন্ডার এই ম্যাচেই ফিরেছেন চেনা ছন্দে! দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চার ইনিংস পর তুলে নিয়েছেন ৪৯তম হাফসেঞ্চুরি।
এর আগে হারারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২৪০ রান। সর্বোচ্চ ৫৬ রান এসেছে ওয়েসলি মাধেভেরের ব্যাট থেকে। এছাড়া অবদান রেখেছেন ব্রেন্ডন টেলর (৪৬), ডিয়ন মায়ার্স (৩৪), সিকান্দার রাজা (৩০) ও রেগিস চাকাভা (২৬)।
মূলত ষষ্ঠ উইকেকেটে সিকান্দার রাজা ও মেধেভেরের ৬৩ রানের জুটিই দুইশো ছাড়াতে ভূমিকা রাখে স্বাগতিকদের।
একটা সময় ব্রেন্ডন টেলরের ব্যাটেই জিম্বাবুয়ের রানের চাকা সচল ছিল। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক থাকলে স্কোরবোর্ড হয়তো আরও সমৃদ্ধই হতো। কিন্তু ২৪.২ ওভারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হিট উইকেট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।
শরিফুল ইসলামের বলে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হয়নি। অসাবধানতায় ব্যাট পেছনে নিতে গিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে বসেন। এরপর আম্পায়াররা বেশ খানিকক্ষণ আলোচনার পর আউটের সিদ্ধান্ত দেন তাকে। আউটের আগে ৫৭ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় টেলর করেন ৪৬ রান।
এর পর সিকান্দার রাজা ও মেধেভেরের জুটিই সমৃদ্ধ করে স্কোরবোর্ড। শরিফের আঘাতে মেধেভেরে ফিরে গেলে এর পর আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেননি কেউ।
বল হাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল শরিফুল। শেষের আঘাতে বাঁহাতি পেসার ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সাকিব ১০ ওভারে ৪২ রান খরচায় পেয়েছেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট শিকার তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের।