মিরপুরে নাসুম-শো

বাংলাদেশের উইকেট উৎসবের শুরুটা করেছিলেন শেখ মেহেদী হাসান। তবে অস্ট্রেলিয়ার ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন আসলে নাসুম আহমেদ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলেছে নাসুম-শো। এই বাঁহাতি স্পিনার একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া-বধের।

৪ ওভারের বোলিং কোটা পূরণ করেছেন এই স্পিনার। তার বোলিং ফিগারটা এমন- ৪-০-১৯-৪। অর্থাৎ, ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। শুরুটা করেছিলেন ওপেনার জশ ফিলিপেকে দিয়ে। এরপর তুলে নেন ম্যাথু ওয়েড ও অ্যাশটন অ্যাগারের উইকেট। আর সবশেষে এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট মিচেল মার্শকে তুলে নেন।

মার্শ টিকে থাকায় অস্ট্রেলিয়া আশার আলো দেখতে পাচ্ছিল। কিন্তু নিজের শেষ ওভারে এই ব্যাটসম্যানকেও নাসুম ফেরান শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ বানিয়ে। ফেরার আগে মার্শ ৪৫ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় করেন ৪৫ রান।

তার বিদায়ে অস্ট্রেলিয়া হারায় ষষ্ঠ উইকেট। ১৭ ওভারে স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ৯৫। সফরকারীদের লক্ষ্য ১৩২ রানের।  

অস্ট্রেলিয়ার ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’

এমনিতেই বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে নাস্তানাবুদ, এর ওপর আবার হিট উইকেটের শিকার! এ যেন অস্ট্রেলিয়ার ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ অবস্থা। অ্যাশটন অ্যাগার পা দিয়ে আঘাত করে স্টাম্প ভাঙলে পঞ্চম উইকেট হারায় সফরকারীরা।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে রীতিমতো ধুঁকছে অস্ট্রেলিয়া। স্বাগতিক স্পিনারদের সামনে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর অ্যাগারকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন মিচেল মার্শ। সঙ্গ দেওয়া অ্যাগার উইকেট বিলিয়ে এসেছেন হিট উইকেট হয়ে।

নাসুম আহমেদের বল এতটা পিছিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন অ্যাগার যে, তার জুতার পেছনের অংশ আঘাত করে স্টাম্পে। বেল পড়ে যাওয়ায় হতাশায় পোড়ে অস্ট্রেলিয়া, আর উইকেট আনন্দে মাতে বাংলাদেশ। দুঃখজনক আউট হওয়ার আগে অ্যাগার ১২ বলে করেন ৭ রান।

অ্যাগারের বিদায়ের পর অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ১৫ ওভারে ৫ উইকেটে ৮২ রান। সফরকারীদের লক্ষ্য ১৩২ রান।

বাংলাদেশের স্পিনে এলোমেলো অস্ট্রেলিয়া

দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং শুরুর হচ্ছে, টেলিভিশনের সামনে থাকা দর্শকেরা নড়েচড়ে বসারও সুযোগ পেলেন না। উইকেট আনন্দে মাতলেন শেখ মেহেদী হাসান। সেই শুরু, একে একে আসতে থাকলো উৎসবের উপলক্ষ। নাসুম আহমেদ হয়ে সাকিব আল হাসান। ফল, বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে এলোমেলো অস্ট্রেলিয়া।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১১ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম বলে উইকেট হারানোর পর ধাক্কা আরও জোরে লাগে দ্রুত ২ উইকেট হারালে। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে যে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, সে কথা অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়রা বলে গিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। তাই বলে এতটা হবে, সেটা হয়তো চিন্তা করেননি।

সাকিব বল তুলে নিয়েই করেছেন উইকেট উদযাপন। মোয়েসেস হেনরিকসকে বোল্ড করে তৃতীয় উইকেট এনে দিয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বল লেগ সাইডে টেনে খেলতে গিয়ে বোল্ডের শিকার এই ব্যাটসম্যান। ফেরার আগে ২ বলে করেন মাত্র ১ রান।

হেনরিকসের বিদায়ের পর অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান। এর আগে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে করেছে ১৩১ রান।

দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের, প্রথম বলেই উইকেট

প্রথম বলেই উইকেট বাংলাদেশের। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিলেন শেখ মেহেদী হাসান। এই স্পিনারের প্রথম বলে আউট হয়ে গেছেন অ্যালেক্স ক্যারি। এখানেই শেষ নয়, দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশ পেয়েছে আরেকটি উইকেট।

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩১ রান করেছে বাংলাদেশ। বড় স্কোর গড়তে না পারায় বোলিংয়ে দারুণ শুরু প্রয়োজন ছিল স্বাগতিকদের। সেই শুরুটা এনে দিলেন মেহেদী। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ শুরুতে তার হাতেই তুলে দিয়েছিলেন বল। বল পেয়েই বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন ক্যারিকে।

তাতে কোনও রান তোলার আগেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। শুরুর ধাক্কা সামলাবে কী, দ্বিতীয় ওভারে আবার উইকেট হারিয়েছে তারা। নাসুম আহমেদের বলে ফিরে গেছেন জশ ফিলিপে। স্টাম্পিং হয়ে ফেরার আগে ৫ বলে ১ ছক্কায় করেন ৯ রান। সফরকারীদের স্কোর ছিল ২ ওভারে ২ উইকেটে ১১ রান।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই কাজ সহজ করে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বমানের বোলারদের সামলানোর চ্যালেঞ্জ অবশ্যই ছিল। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ সে কথা সংবাদ সম্মেলনে বলেও গিয়েছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের ‍খুব বেশি চেষ্টা করতে হয়নি, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে তাদের কাজ সহজ করে দিয়েছেন। উইকেট ছেড়ে ‍আসার খেলায় নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ করেছে ৭ উইকেটে ১৩১ রান।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাজেভাবে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাটসম্যান। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার (৯ বলে ২) ও নাঈম শেখের (২৯ বলে ৩০) আউট ছিল দৃষ্টিকটু। নুরুল হাসান সোহানও (৪ বলে ৩) উঠবেন কাঠগড়ায়। ধৈর্যশীল ইনিংস খেলা সাকিব আল হাসানের (৩৩ বলে ৩৬) আউটেও কৃতিত্ব পাবেন না বোলার জশ হ্যাজেলউড। ‍কেবল আফিফ হোসেন (১৬ বলে ২৩) ও শামীম হোসেনের (৩ বলে ৪) আউট দুটিতে ছিল মিচেল স্টার্কের প্রশংসা করার মতো বোলিং।

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল বোলার হ্যাজেলউড। ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট। স্টার্ক ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই।